ওয়ানডে সিরিজ খেলে দেশে ফিরে মাশরাফী সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আড্ডায় মজা করে বলছিলেন, পুরো সিরিজটা টি-টুয়েন্টি হলে ভাল হতো। তাতে হয়ত ভিন্ন কিছু হত! ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায় ২০ ওভারের ম্যাচ। মিরাকল কিছু ঘটার সম্ভাবনা এই ফরম্যাটেই বেশি থাকে। সাউথ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনে টেস্ট-ওয়ানডের চেয়ে টি-টুয়েন্টিতে লড়াই জমানো তুলনামূলক সহজ হবে ভেবেই একথা বলেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক।
মাশরাফীর ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেছে টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। ব্লুমফন্টেইনে লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ। পুরো সিরিজে যা আরাধ্য ছিল সেই লড়াইয়ের দেখা মিলেছে যখন কিনা সফর ভুলতে চাওয়ার মত এক শেষের পথে। প্রোটিয়াদের ১৯৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ করেছিল ১৭৫ রানে। প্রথম টি-টুয়েন্টিতে হার ২০ রানের। টেস্ট ওয়ানডে সিরিজের চরম ব্যর্থতার দগদগে স্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশের এমন লড়াই খানিকটা ইতিবাচকতার কথাই বলে।
আগের ম্যাচের সেই লড়াইয়ের প্রেরণা নিয়ে সফরের শেষ ম্যাচে নামছে সাকিব আল হাসানের দল। বাংলাদেশ সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচটি। আর শেষ ম্যাচে জয় সঙ্গী করে হতাশার সফরকে একটু হলেও রাঙাতে চান সাকিব, ‘আর কী আছে? জয় ছাড়া আর কিছুই দেখি না। অন্তত এটাই তো আমাদের চাওয়া।’
প্রথম ম্যাচ হয়েছে হাইস্কোরিং। পচেফস্ট্রমের উইকেটও রান প্রসবা হবে বলে মনে করছেন সাকিব, ‘সবাই বলছে একটু মন্থর হয় এখানকার উইকেট। মনে হচ্ছে হাইস্কোরিং ম্যাচই হবে। আগে ফিল্ডিং করলে ওদের কম রানে আটকাতে চেষ্টা করব। আর আগে ব্যাটিং করলে ১৮০ না করলে জয়ের সুযোগ কম।’
সাকিবকে আত্মবিশ্বাসী করছে ব্লুমফন্টেইনের লড়াকু ব্যাটিং। দুশর কাছাকাছি রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভার সমানতালেই লড়েছে বাংলাদেশ। তবে আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত জয় না পাওয়ায় দ্বিতীয় মেয়াদে টি-টুয়েন্টির অধিনায়কত্ব পাওয়া সাকিবের আক্ষেপও হচ্ছে।
‘আরেকটু ভাল হলে জেতা সম্ভব ছিল। আমরা একটা বাড়তি বোলার নিয়ে খেলেছিলাম, পরিকল্পনা ছিল ওদের যদি ১৮০ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারি, তাড়া করার আত্মবিশ্বাস ছিল। উইকেটও সে রকমই ছিল। ফিল্ডিংয়ে কিছু ভুল হয়েছে। কিছু উন্নতির জায়গা আছে। সেগুলো করতে পারলে আরও একটা ভাল ম্যাচ হওয়া সম্ভব।’
সেই ভাল ম্যাচের জন্য সতীর্থদের কিছু বার্তা আর কিছু দর্শনও বাতলে দিচ্ছেন সাকিব। বার্তাটা ডট বল নিয়ে। প্রথম ম্যাচে ৪৫টি ডট বল খেলা বাংলাদেশের অধিনায়ক জানালেন এবার ডট বলের সংখ্যা কমানোর দিকে মনোযোগ দেবে তার দল।
সেটি আবার এমনও নয় যে, সাকিব প্রতি বলেই ব্যাট চালাতে বলছেন সতীর্থদের। টি-টুয়েন্টির ধুমধাড়াক্কা মানেই যে সব বলে মারতে হবে সেটা না ভাবার দর্শনও বাতলে দিচ্ছেন সাকিব। বলছেন পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার জন্য, ‘রান করতে হলে ঝুঁকি নিতেই হয়। আবার একটু ভারসাম্য আনাও দরকারি। টি-টুয়েন্টি ফরম্যাট বলে ঝুঁকি যেমন নিতে হবে, রান করার পাশাপাশি উইকেটও ধরে রাখতে হবে।’
সাকিবের দর্শন শিক্ষা নিয়ে দল যদি নতুন করে তাড়িত হয়, ঘুরে দাঁড়ায়, তাতে সান্ত্বনার একটা জয় অন্তত মেলে। বাঁচে খানিকটা ক্রিকেট-সম্মানও!