তার সুযোগ পাওয়াটা অপেক্ষার প্রহর গুনছিল। ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারেন। দ্রুত গতির পেস বোলিংটাও সমান কার্যকরী। বাংলাদেশ ক্রিকেটের হাহাকারের যে জায়গাটা- একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের প্রত্যাশা, সেটা মেটাতে পারবেন কিনা সময়ের ওপরই তোলা থাকছে। আপাতত ২০ বছরের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনে সেই অমূল্য রতনেরই খোঁজ করছে টাইগার দল।
বিশ্ব ক্রিকেটে এখন গতির সমাদর। সেই গতি যতটা না জোরে বল করার বা জোরের ওপর ব্যাট চালানোর, তারচেয়ে বেশি একজন ক্রিকেটারের মাঠের সবগুলো অনুষঙ্গের সঙ্গে তাল মেলাতে পারার। সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হয়ে ওঠেন এই রকমের ক্রিকেটাররা যারা কয়েকজন খেলোয়াড়ের কাজগুলো একাই সেরে দিতে পারেন! বিরল নয়, তবে আকাঙ্ক্ষিত সেই প্রজাতির নাম ‘অলরাউন্ডার’।
বাংলাদেশের দিকে তাকালে সাকিব আল হাসানের কথাই সবার আগে আসবে। বিশ্ব ক্রিকেটেরই সেরাদের অন্যতম। বল-ব্যাট, হাতে জাদু দেখান সকল বিভাগেই। অকাল প্রয়াত মানজারুল রানা বা বোলিং অ্যাকশনের চক্রে পড়া সোহাগ গাজী, আগে পিছে আরো কয়েকজনের মাঝে সাকিবের ভার কমানোর খোঁজ ছিল; কেউই সাকিবের ধারে কাছেও যেতে পারেননি। ইদানীং ১৯ বর্ষী এক তরুণের মাঝে দ্রুত এগোনোর সম্ভাবনা দেখছে টাইগার ক্রিকেট, সেই মেহেদী হাসান মিরাজের পথচলার শুরুটাও দুর্দান্তই হয়েছে।
এ তো গেল স্পিন অলরাউন্ডারের প্রত্যাশার সংক্ষিপ্ত তালিকা। পেস-অলরাউন্ডার? যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরোটা জুড়ে শুধু হাহাকারের গল্প! চেষ্টা কম হয়নি। দলের বর্তমান ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে দিয়ে একসময় টুকটাক কাজ চালানো হয়েছে। কিন্তু বড় দল হয়ে ওঠার স্বপ্নের পথে একটু-আধটু পারা নয়, সত্যিকারের একজন পেস-অলরাউন্ডারের অভাবে ভুগেছে দল, যার দেখা পেতে অপেক্ষার তালিকাটা কেবল দীর্ঘই হয়েছে।
বাংলাদেশের বহুদিনের সন্ধানে সাম্প্রতিক যে নামগুলো আসে- ফরহাদ রেজা ও জিয়াউর রহমান সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেননি। আলাউদ্দিন বাবু চেষ্টার কাছাকাছিও টেনে নিতে পারেননি নিজেকে। মুক্তার আলি আটকে গেছেন এক টি-টুয়েন্টিতেই। হালের সৌম্য সরকারের পেসটা কার্যকরী করে তোলা যেত, কিন্তু তাকে উদ্বোধনী ব্যাটিংয়েই মনোযোগী রাখা হচ্ছে। মাশরাফি তো সম্ভাবনার জ্বলা-নেভার মাঝ দিয়েই ক্যারিয়ারের শেষ ধাপে চলে গেলেন। অধরা থাকল তাই অলরাউন্ডারের এই বিভাগটাও।
নির্ভরযোগ্য পেস বোলিং অলরাউন্ডারের সেই অপেক্ষা ঘোচানোর সর্বশেষ সংযোজন সাইফউদ্দিন। চট্টগ্রামে সদ্য শেষ হওয়া ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে বাংলাদেশের একাদশের সেরা পারফর্মারদের একজন ছিলেন। ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে দুই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ৬৮ রান!
শ্রীলঙ্কায় তিন ওয়ানডে সিরিজের আগে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের সঙ্গে ২২ মার্চ ডাম্বুলায় হওয়া ম্যাচে পরখ করতে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল সাইফউদ্দিনকে। তাতে ২৬ রানে এক উইকেট আর ব্যাট হাতে দুই রানে অপরাজিত ছিলেন।
সম্ভাবনার জানানটা দিয়েছিলেন ঘরের মাঠে গত যুব বিশ্বকাপে। তাতে অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন ফেনীর এই ক্রিকেটার। পরে বিপিএল ও বিসিএলে নৈপুণ্য দেখান।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ডানহাতি বোলার এই অলরাউন্ডারের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৩ ম্যাচে ৩৪’র উপর গড়ে ৮৩৩ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৭। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচেও ফিফটি আছে। এই দুই ধরনের ক্রিকেটে উইকেট ৫৯টি। সর্বশেষ দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ইস্ট জোনের হয়ে ১১ উইকেট নেন। একটি অপরাজিত ফিফটির সঙ্গে মোট সংগ্রহ ৯০ রান।
টি-টুয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচে মাত্র দুই ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে ১৩ বলে করেছেন ২২ রান। বিপিএলে টাইগারদের রঙিন পোশাকের অধিনায়ক মাশরাফির দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেই খেলেছেন। দেশ ছাড়ার আগে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলে গেছেন, সেই মাশরাফিই তার অনুপ্রেরণা।
প্রেমাদাসায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার একাদশে সাইফউদ্দিনের সুযোগ মিলবে কিনা সেটা কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা দূরত্বে। ওটা সময়ের হাতেই তোলা থাক। তার আগে অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গেই থাকি। আশান্বিত হই। কেননা মাশরাফি অনুপ্রাণিত করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই। বদলে দিয়েছেন দলের মানসিকতা। হারার আগে নাহি ছাড়িব লড়াকু মেজাজটা ম্যাশের আমলেই তরতরিয়ে বেড়েছে। সেই মাশরাফি যখন কারো অনুপ্রেরণা হন, তার কাছে বাড়তি কিছু আশা করাই যায়! আশার ভেলাটা বহু ক্রোশ ভাসিয়ে নেবার দায়িত্ব এখন সাইফউদ্দিনের।