চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাইকেলের চাকায় তাদের স্বপ্নযাত্রা

সাদিয়া, তন্বী, মাহমুদা, স্মৃতি, তমা, ঐশী ও ইফতেন্নাহার তাদের সবারই স্বপ্ন পড়াশুনা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। কয়েক কিলোমিটার দূরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানে সেই দূরত্ব। সমাজের ভয়, চাপিয়ে দেওয়া প্রথা আর লজ্জা ভেঙে এখন তারা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে।

তারা সবাই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সাখুয়া আদর্শ বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী। তাদের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা নিয়ে কে কি বললো; তা নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই তাদের। বরং এভাবে স্কুলে আসা উপভোগ করে তারা।

নবম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া জাহান। তাদেরই একজন। স্কুল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী উপজেলার ভোলার আলগীর চর গ্রামে তার বাড়ি। সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসে সাদিয়া। একই গ্রামের সহপাঠী নাজমুন্নাহার তন্বী ও মাহমুদা আক্তারও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে।

সাদিয়া, তন্বী ও মাহমুদা জানায়, এতে সময় কম লাগে। পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতে যে কষ্ট হতো, সেই কষ্টতো নেইই। বরং আনন্দেই স্কুলে আসা যাওয়া করা যায়।

স্কুল থেকে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী পলাশকান্দা গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী রওনাক জাহান স্মৃতি। গত বছর উপজেলা প্রশাসন তাকে একটি সাইকেল দেয়। সেই সাইকেল পেয়ে অভিভূত স্মৃতি নিয়মিতই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। মাঝে মাঝে ছোট বোন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ইতিকে নিয়েও স্কুলে আসে সে।

স্মৃতির কথায়, ‘সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসতে অন্যরকম ভাল লাগে। মেয়েরাও যে ইচ্ছা করলে পারে, সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসাটা তার সামান্য একটা নজির মাত্র। সুযোগ পেলে আরো বড় কিছু করতে পারবো আমরা।’

দশম শ্রেণির ছাত্রী হাওয়া মিদুল ইফতেন্নাহার জানায়, সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ায় যেমন সময় বাঁচে, তেমনি রাস্তায় মেয়েদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতিও অনেকটাই এড়ানো যায়।

মহসিনা আক্তার তমার মন্তব্য, ‘সবকিছুতেই পুরুষের উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পেতে মেয়েদের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসাটা একটা দারুণ ব্যাপার মনে হয়।’

দশম শ্রেণির ছাত্রী রিফাহ সানজিদা ঐশীর বাড়ি স্কুল থেকে একেবারেই কাছে। অনুপ্রেরণা থেকে সেও সাইকেল চালিয়ে যাওয়া আসা করে।

ঐশী তার চাচাতো ভাইয়ের সাইকেল দিয়ে চালানো শিখে এখন অন্যদের সাথে নিজেও স্কুলে যায়। তার অভিমত, সময়ের সাথে বদলে যাওয়ার মিছিলে শামিল হয়েছি আমি। 

সাখুয়া আদর্শ বিদ্যানিকেতনের (উচ্চ বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক মোঃ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দূর থেকে আসা যেসব মেয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা যাওয়া করে, অভিভাবকরা সচেতন হলে তারাও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পারে।’