“আমারে মাইরেন না, আমি আর নিউজ করব না।” – চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারের এ কথাটা সাংবাদিকদের কলমকে থমকে দেয়।
কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরলে এখন জীবন হয় বিপন্ন। এটা একটি দেশের জন্য কখনোই ভালো হতে পারে না। ক্ষমতাবান প্রভাবশালীদের অপকর্মের কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন হুমকির মুখে পড়া, হত্যা, নির্যাতনের শিকার কিংবা মামলা হামলার স্বীকার নতুন কোন ঘটনা নয় এ দেশে। তবে এ ধরনের হত্যা বা নির্যাতনের বিচার পাওয়া যায় না সহজে। আজ অবধি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়নি। আর বিচার কবে শেষ হবে তা বলা অসম্ভব।
বাংলাদেশে গত ২৮ বছরে ২২ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে একই সময়ে সারা বিশ্বে ১৩৮৭ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট বা সিপিজির তথ্য অনুযায়ী। দেশ ও মানুষের জন্য যারা সাহসিকতা নিয়ে ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরে; সে সাংবাদিকদের কলম অন্যায়কারীদের দ্বারা এ হারে বিপন্ন হলে সাধারণ জনগণ হয় দ্বিধান্বিত।
চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারকে কে বা কারা অপহরণ করেছে তা প্রকাশ হবে কিনা সেটা বলা কঠিন। আর নির্যাতনের জন্য ন্যায় বিচার পাবে কিনা তাও এ মূহুর্তে বলা মুশকিল। কিন্তু তার নিখোঁজ হবার ঘটনাটা গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের জন্য যে হুমকির ইঙ্গিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাংবাদিকতার নৈতিক বোধ থেকে, একজন সাংবাদিক সমাজের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে তার লেখনির মাধ্যমে দেশ ও জনগণের সামনে তুলে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে কাজটি করতে গিয়ে যখন নির্যাতনের শিকার হয় তা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জ্বার। কারণ দেশের সরকার ব্যবস্থাপনার চতুর্থ স্তম্ভ হলো সাংবাদিকতা। যার মাধ্যমে সমাজের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয়। তবে সে চতুর্থ স্তম্ভ যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাবানদের দ্বারা প্রভাবিত বা নির্যাতিত হয় তখন অন্যায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
কলমের চেয়ে পেশী শক্তির দাপট কখনো বেশি হতে পারে না। এ সত্যটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সাংবাদিকদের মনোবল আর একতাবদ্ধ থাকাটা খুব জরুরি। চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারকে যারা তুলে নিয়ে গিয়ে সাংবাদিকমহলে তাদের ক্ষমতা জাহির করছে তাদের খুঁজে বের করতে না পারলে আগামী দিনে গোলাম সারোয়ারের মত ঘটনার শিকার আর কেউ হবে তা স্পষ্ট। কারণ ক্ষমতার হাত ধরে এসব পেশিশক্তি প্রভাবশালীরা মানুষকে অত্যাচার করছে নানাভাবে। তাদের জন্য এদেশটা এখন সব সম্ভবের দেশ।
তাই আইনগতভাবে চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারকে ন্যায় বিচার পেতে হলে সাংবাদিক মহলের সরব থাকতে হবে। তা না হলে সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাবে অন্যায়কারী দুর্নীতিবাজদের অন্তরালের কাহিনি।
বলা হচ্ছে বিশেষ কোন সংবাদ প্রকাশের কারনে সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার নির্যাতনের শিকার। অথচ সে সংবাদটি নিয়ে অনেকটাই নিশ্চুপ গণমাধ্যম। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনাকে জনসম্মুখে তুলে ধরার দায়িত্ব অন্য সব গণমাধ্যমের।
তাহলেই সম্মিলিত প্রয়াসে অন্যায়ের পথরুদ্ধ করা সম্ভব হবে। অন্যায়কারী ক্ষমতাধরদের কাছেও কলমের শক্তি কতটা ভুমিকা রাখে তা প্রমাণিত হবে।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশে দুর্নীতি বাড়ছে। সে সাথে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা ভয়ভীতি কাজ করে ক্ষমতাবানদের হুংকার দেখে। এ অবস্থায় যখন একজন সাংবাদিক নিখোঁজ হয়ে যায়, তখন হতাশা বাড়ে সমাজে। কারণ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্বজন হারাতে কেউ চায় না। তবে এভাবে চলতে থাকলে সাংবাদিকের কলম বিপন্ন হবে। যা দেশের জন্য হিতকর হবে না কখনো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে নারাজ, সেখানে সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারের প্রতি জঘন্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে কলম আর আইনী শক্তি দিয়ে। কারণ দেশ আর মানুষের প্রতি সংবাদ ও সাংবাদিকের দায়িত্ব বোধটা পরাজিত হতে পারে না এসব অন্যায়কারীদের কাছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)