চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাংবাদিকদের প্রতি হঠাৎ এমন অসহিষ্ণু আচরণ কেন?

সাংবাদিক নির্যাতনের সংখ্যা দিন দিন দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘ হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনা প্রমাণ করে- হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় হয়রানীমূলক মামলার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। আজকেও রাজশাহীতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আরাফাত রহমান। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তার অপরাধ; ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুরের পর একজন পরিবহন শ্রমিককে লাঞ্ছিত করার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেছিলেন। চোখে, মাথায় আর পিঠে আঘাত পাওয়া  গুরুতর আহত আরাফাতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আক্রান্ত পরিবহন কোম্পানীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, চট্ট্রগ্রাম থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা বিজয়কে বাসে ধূমপান করতে নিষেধ করার কারণেই এ ভাঙচুরের ঘটনা। গত কয়েকদিনে এমন আরো কয়েকটি ঘটনার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। ২৭ জুন এক লাখ টাকা না পেয়ে ডেইলি অবজারভারের ফটোসাংবাদিক আশিক মোহাম্মদের পকেটে ইয়াবা দিয়ে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দেয় পল্টন থানা পুলিশের একটি টহল দল। আরেকটি ঘটনায় ২৩ জুন যমুনা টেলিভিশেনের রিপোর্টার নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘বিচারপতির লাল সিঁড়ি ও দেলোয়ারের ক্র্যাচ’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। এর আগে ১৩ জুন মানিকগঞ্জের একজন বিচারককে নিয়ে প্রতিবেদন করায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রিপোর্টার গোলাম মুজতবা ধ্রুবর বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় গত ২ জুলাই দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিকুল ইসলাম বাবরের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা করা হয়। ৬ জুলাই দৈনিক সকালের খবরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সহসভাপতি আজমল হক হেলালের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়।  আজমল হক একজন সংসদ সদস্যকে নিয়ে করা প্রতিবেদন ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে তাতে মন্তব্য করেছিলেন। এসব ঘটনা ঘটেছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। তবে এখানেই শেষ নয়; গত মে মাসে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০১৭’ উপলক্ষে ‘সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মীদের পেশাগত ঝুঁকি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আর্টিকেল ১৯। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত এক বছরে নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৪১ জন সাংবাদিক। আর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী গত বছর ১১৭ জন সাংবাদিক নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অপরাধের খবর প্রকাশ করায় হামলা-মামলার এসব ঘটনা ঘটে। এসব তথ্য আর পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলা-মামলা শুরু হয়েছে।  কিন্তু কেন? দেশে হঠাৎ কি এমন হয়ে গেল যে সাংবাদিকদের প্রতি একটি গোষ্ঠি অসহিষ্ণু আচরণ শুরু করল? এক্ষেত্রে  প্রভাবশালী নেতা, বিচারক, পুলিশ প্রশাসন সবাই যেন এক। যেন তারা পণ করেছেন; সব ঝাল মেটাতে হবে সংবাদিকদের ওপর। তাদের কাছে যেন সাংবাদিকরাই যত নষ্টের গোড়া! অতীতেও আমরা লক্ষ্য করেছি সাংবাদিকদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনের একরকম উদাসীনতা। যে কারণে বেশিরভাগ নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতরা পার পেয়ে যায়। আমরা চাই এই সংস্কৃতি থেকে দেশ-জাতি মুক্তি পাক। অবিলম্বে সাংবাদিক নির্যাতনকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হোক। স্বাধীন সাংবাদিকতার বাধা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা হোক।