‘জয়যাত্রা বিডিনিউজ’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশক-সম্পাদক হওয়ায় ‘ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক’ হিসেবে তথ্য অধিদপ্তরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর।
তবে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কার্ডের ছবিসহ যে পোস্টটি করা হয়েছিলো সেটি তিনি করেননি বলে দাবি তার। হেলেনা জানান: ফেসবুকে নিজের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড তার অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মীরাও জানে। তাদেরই কেউ হয়তো পোস্টটি দিয়েছিলো।
ওই পোস্টের পর এ বিষয়ে তীব্র সমালোচনা দেখে নিজেই পোস্টটি সরিয়ে দেন বলে জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে নিজের বহু পরিচয় তুলে ধরা এই ব্যবসায়ী।
তথ্য অধিদফতরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হেলেনা জাহাঙ্গীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আপনারা জানেন আমার একটা নিউজ পোর্টাল এবং একটা ম্যাগাজিন আছে। এমনিতেও সচিবালয়ে আমাদের জন্য সব সুবিধা আছে। এই কার্ড দেওয়ার আগে আট মাস যাচাই-বাছাই করা হয়। আমার বিরুদ্ধে কোনো ক্রাইম রিপোর্ট নাই।
‘তাছাড়া আমি লেখালেখি করি, আমার ছয়টা বই বের হয়েছে, আমি বাংলা একাডেমিতে অ্যাপ্লাই করেছি মেম্বার হওয়ার জন্য। আমি জয়যাত্রা বিডিনিউজ পোর্টালের সম্পাদক, পজিটিভ বাংলাদেশ ম্যাগাজিনের সম্পাদক, লেখালেখি করি। একটি নিউজ পোর্টালের সম্পাদক হিসেবে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাওয়া যৌক্তিক’, বলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন: এটার যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে। কারণ আমিতো লেখালেখি করি। আমি একটা নিউজপোর্টাল এবং ম্যাগাজিনের এডিটর। দেখলাম এই কার্ড পাওয়া নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, আমাকে অনেকে ইনবক্স করছে, কলও করছে। আমি আসলে এই বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি অবগত না।
তাহলে কেনো এই কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: আমারতো মাঝে মাঝে মিনিস্ট্রিতে যেতে হয়। জয়যাত্রা বিডিনিউজ আছে আমার, ভিউয়ার প্রচুর। জয়যাত্রা বিডিনিউজের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন নিয়েছি, আমিতো সম্পাদক, একটা নিউজের সম্পাদক।
কার্ডের ছবি তুলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে করা পোস্টটি কেনো সরালেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমি জানিই না (পোস্টের বিষয়ে)। আমি ফ্রি হয়ে রাত ১২ টার পর ফেসবুকে ঢুকি। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট শুধু আমিই ইউজ করি না, আমার অফিসিয়ালভাবে ইউজ হয়, আবার মাঝে মধ্যে ফেসবুক হ্যাকও হয়ে যায়।
‘এ নিয়ে আমার অনেক প্রমাণ আছে। কার্ডটা ৮ মাস পর পেয়েছি এটা অফিসে বলার পর কেউ হয়তো এটা নিয়ে পোস্ট করেছিলো। রাতে আমি এই পোস্ট দেখেই এটা রিমুভ করে দেই।’
৮ নভেম্বর হেলেনা জাহাঙ্গীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন: সময়ের ও ব্যস্ততার কারণে দীর্ঘ আট মাস পর এসে কার্ড নিজ হাতে তুলে নিলাম। নিজে না এলে আসলে কোনও কাজ হয় না, সেটাই আজ প্রমাণিত হলো। তবে এখনও এই কার্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমি অবগত নই। কোন এক শুভাকাঙ্ক্ষী করতে বললো, তাই করলাম। পত্রিকায় প্রতিনিয়ত লেখালেখি করি, বই লিখি। কখনও জানি না কোথায় কী লাগে। কোনটার কী কাজ। আমি ব্যবসায়ী, ব্যবসার কাজ ছাড়া কিছুই বুঝি না।
এ স্ট্যাটাস দেখে পেশাদার সাংবাদিকরা এরকম কার্ড পাওয়া এবং তা এভাবে ফেসবুকে দেয়ার সমালোচনা করেন। বছরের পর বছর সাংবাদিকতা করেও তথ্য অধিদফতরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড না পাওয়া সাংবাদিকরা একজন ব্যবসায়ীকে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ফেসবুক কমেন্টে লিখেন: অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের নমুনা যদি এমন হয়, সত্যি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হিসেবে আমি লজ্জিত।
হেলেনার ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে সাংবাদিক খোরশেদ আলম প্রশ্ন করেন: ব্যবসায়ী হয়ে কিভাবে তিনি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পেলেন। প্রতিক্রিয়ায় তখন হেলেনা বলেন: অনলাইনের কোনও বেল (গ্রহণযোগ্যতা) আছে?
প্রবীণ সাংবাদিক কাজী আব্দুল হান্নান লেখেন: স্বাগতম তথ্য মন্ত্রণালয়কে! একজন ব্যবসায়ী ও লেখিকাকে সাংবাদিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে অ্যাক্রেডিটেশন দেওয়ার জন্য। সাধুবাদ অবশ্যই তাদের পাওনা।