বয়স প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই! তবুও নাটক সিনেমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সমানতালে। দাদী-নানীর চরিত্রেই দেখে অভ্যস্ত দর্শক। তবে ছকবাঁধা চরিত্রের মধ্যে থেকেও অভিনয় দিয়ে নিজের স্বকীয়তার ছাপ রেখে চলেছেন তিনি। এবার আরো একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্র নিয়ে বড় পর্দায় আসতে চলেছেন তুখোড় এই অভিনেত্রী।
বলছি গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামানের কথা। আর চ্যালেঞ্জিং চরিত্রটি নির্মিতব্য ‘সুজুকি’ ছবির। তরুণ নির্মাতা সোয়েব সাদিক সজীবের পরিচালনায় ছবিটির শুটিং শেষ হয়েছে চলতি মাসেই। রাজশাহী অঞ্চলের সাঁওতালপল্লিতে। যে ছবিতে একজন দুর্দান্ত সাঁওতাল নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
এই করোনাকালে তীব্র শীতের মধ্যেও প্রায় সপ্তাহখানেক টানা কাজ করেছেন দিলারা জামান।নিজের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় এমন উদ্যোমী অভিনেত্রীকে পেয়ে তাই উচ্ছ্বসিত তরুণ পরিচালক সোয়েব সাদিক সজীব। চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথার শুরুতেই তাই প্রবীণ এই অভিনেত্রীকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা বলছিলেন পরিচালক। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেই অভিনয় করেছেন দিলারা জামান।
নির্মাতার কথায়, ‘‘দিলারা আপা সাঁওতালি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রটাই এমন ছিলো যে, তাকে শুটিংয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো মেকাপে থাকতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গে কিন্তু এখন বেশ শীত পড়েছে, আর আমাদের শুটিং শেষ হতে কোনো কোনো দিন রাত ১টা- ২টা বেজে গেছে; তবু কোনোদিন বিরক্ত হননি তিনি। আবার ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে প্রতিদিন ভোর বেলা! যে কয়দিন তিনি আমাদের শুটিংয়ে ছিলেন, প্রচণ্ড কষ্ঠ করতে হয়েছে তাকে। এই বয়সে এসেও এতো ডেডিকেশন, তুলনাহীন! তবু তিনি যে নতুন পরিচালকের উপর ভরসা করেছেন, সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নাই।’’
শুধু দিলারা জামানেরই নয়, ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা শহীদুল আলম সাচ্চু, কচি খন্দকার, পারভেজ মুরাদ ও কাজী রাজুর অভিনয় ও ডেডিকেশনের প্রতিও ভক্তি প্রদর্শন করেন নির্মাতা। ছবিতে নায়ক-নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন ‘দেশা দ্য লিডার’ খ্যাত অভিনেতা শিপন মিত্র এবং নবাগতা সৈয়েদা নীপা।
গল্পের প্রয়োজনেই ‘সুজুকি’তে নতুন নায়িকা। পরিচালক জানালেন, শুটিংয়ের আগে আমি বেশ কয়েকবার রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন সাঁওতালপল্লিতে গিয়েছি। সেখানে দেখেছি ১৪/১৫ বছরের বেশি প্রায় সব মেয়েরই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। কিছু এনজিও কাজ করলেও সেখানে শিক্ষার হারও যথেষ্ট আশঙ্কাজনক। সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে, নায়িকার বয়স কম হলেই কিছুটা বাস্তবসম্মত হয়। সেজন্য নতুন মুখ নিয়েই কাজ করলাম।
‘সুজুকি’ সাঁওতালি ভাষা। এর বাংলা অর্থ পরিশ্রমী। নির্মাতা বলেন, সাঁওতালি মেয়েরা দারুণ পরিশ্রমী হন। গল্পের সাথে মিল রেখে প্রাথমিকভাবে ছবির নাম এটা রাখা (ওয়ার্কিং টাইটেল) হয়েছে। ভবিষ্যতে ছবির নাম পরিবর্তন হতে পারে।
আর আট-দশটা সিনেমার মতোই এটিতেও আছে প্রেম ভালোবাসা। তবে প্রেম ভালোবাসার পাশাপাশি নির্মাতা এই সিনেমার মাধ্যমে সাঁওতালদের জীবন যাপন, আচার অনুষ্ঠানের চিত্রটিও ফুটিয়ে তুলতে চলেছেন। সেই সাথে সিনেমায় উঠে আসবে জাতিগত বৈষম্যের গল্পও!
মাহি কথাচিত্রের ব্যানারে ছবিটির মূল গল্প বরজাহান হোসেনের। ছবির মূল ভিত সম্পর্কে এই মুহূর্তে কিছু না বলতে চাইলেও সাওতাঁলদের নিয়ে নির্মাতা ‘সুজুকি’র গল্প পাওয়ার পেছনের কথা বললেন অকপটে।
জানালেন, গল্পটি তিনি প্রথম শুনেন ২০১৫ সালে। সাঁওতালপল্লির পাশেই নাট্যকার বরজাহান হোসেনের বোনের বাড়ি। পাঁচ বছর আগে সেখানে বেড়াতে গিয়ে সাঁওতালদের জীবন দেখে গল্পটি মাথায় আসে বরজাহানের। সেই গল্প শোনান নির্মাতাকে। গল্পের প্রেক্ষাপট শুনে এটি নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে লেগে যান নির্মাতা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলে চিত্রনাট্য উন্নয়নের কাজ। অবশেষে নভেম্বরে হলো শুটিং।
নির্মাতা বলেন, ‘‘সাধারণত আমাদের সিনেমার মহরত হয় ঢাকায়। কিন্তু আমরা যে অঞ্চলের মানুষের গল্প বলতে চলেছি, তাদের সাথেই শুভ মহরতের আনন্দ ভাগ করতে রাজশাহীর সেই সাঁওতালপল্লিতেই আয়োজন করেছি। দারুণ সাড়াও পেয়েছি। সেই অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি ছিলো নতুন অভিজ্ঞতা।’’
সিনেমা-নাটকের পেশাদার অভিনেতাদের ছাড়াও ‘সুজুকি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর ৩০ জন। ছবিতে গান করেছেন সাঁওতাল ব্যান্ড ‘সেনেগেল’। নির্মাতা সোয়েব সাদিক সজীব জানান, ব্যান্ডটি সাঁওতাল ভাষায় গান করবে। এমনকি ছবির গবেষণা দলেও কাজ করেছেন ওই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
নির্মাতা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘আমরা সব সময় বলি আমাদের চলচ্চিত্রে মৌলিকতার অভাব, আশা করছি ‘সুজুকি’র মতো মৌলিক গল্পের সিনেমা তেমন অভিযোগ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই দিবে এবং দর্শকপ্রিয়তা পাবে।’’