সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার দুর্নীতির মামলায় দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ কথা বলা হয়েছে।
রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৬৭ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, আপিল খারিজ করা হলো। বাকি সাজা ভোগ করতে বিচারিক আদালত রায়ের কপি গ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে আপিলকারী (নাজমুল হুদা) বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। এতে ব্যর্থ হলে বিচারিক আদালত তার গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দুর্নীতি একটি অভিশাপ। সমাজের সবক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখা যায়। দুর্নীতি সমাজের নৈতিক অবস্থা নষ্ট করে এবং সরকারি কর্মচারীর দুর্নীতি কেবল নৈতিক অবস্থাই নষ্ট করে না বরং এটি জাতীয় অর্থনীতি ও জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খবরের অন্তরালে’র জন্য মীর জাহের হোসেনের কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা।
২০০৭ সালের ২১ মার্চ দুদকের উপ-পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদার বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় এ বিষয়ে মামলা করেন।
২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত মামলার রায়ে নাজমুল হুদাকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করেন। আর তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদা ও সিগমা হুদা আপিল করলে ২০১১ সালের ২০ মার্চ তাদের খালাস দেন হাইকোর্ট।
কিন্তু দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে বিষয়টি পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্টে এই মামলার পুনঃশুনানি নেওয়া হয়।
গত বছরের ৮ নভেম্বর নাজমুল হুদাকে বিচারিক আদালতের দেয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা কমিয়ে চার বছরের কারাদণ্ড এবং তিন বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তার স্ত্রী সিগমা হুদার কারাগারে থাকাকালীন সাজা হিসেবে গণ্য করে রায় দেন হাইকোর্ট।
সেই সাথে বিচারিক আদালত যেদিন রায় গ্রহণ করবেন, সেদিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে নাজমুল হুদাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
হাইকোর্টের দেয়া ৮ নভেম্বরে ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ আজ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল।