নতুন পে-স্কেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন অনেক বাড়ায় পণ্যবাজারে যে প্রভাব পড়বে তা সামলাতে হিমশিম খাওয়ার আগাম চিন্তায় বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশা নেমে এসেছে। অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি কর্মজীবীরা বলেছেন, বেসরকারি খাতেও বেতন-ভাতা না বাড়লে নতুন পে-স্কেল তাদেরকে বাড়তি চাপে ফেলবে।
তারা বলছেন, মাত্র ২১ লাখ মানুষের বেতন বৃদ্ধির অজুহাতে বাজারে দাম বাড়ানোর প্রবণতায় নিম্ন আয়ের মানুষদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। সেসঙ্গে সামাজিক অসন্তোষও বাড়তে পারে।
একটি তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানিতে কর্মরত সামাউন সাফকাত চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এই বেতন বৃদ্ধির ফলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের উপর চাপ আসবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়বে। বাড়বে বাড়ি ভাড়া থেকে সব কিছুই।
সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা ধরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য অষ্টম পে-স্কেলে সোমবার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে তাদের চলতি বছর শুধু মূল বেতন বাড়লেও আগামী অর্থবছর থেকে বেতন-ভাতা সব বেড়ে মাসিক আয় প্রায় দ্বিগুণ হবে।
বেতন বৃদ্ধির হার উল্লেখ করে সাফকাত বলেন, সরকারি চাকুরেদের বেতন এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গেলাে। কিন্তু আমাদের তো সেভাবে বাড়ে না। তাই বাজারে গেলে সমস্যাটা আমাদেরকেই বেশি মোকাবেলা করতে হবে।’
পে-স্কেলে বেতন বৃদ্ধিকে কিছুটা ইতিবাচকভাবে দেখলেও দ্রব্যমূল্য নিয়ে আশঙ্কা করছেন একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সালমা মুন্নি। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, সব কিছু মিলিয়ে আমি এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখি। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কায় আছি। বেতন বৃদ্ধির ফলে সব কিছুর দামই বাড়ানো হবে।
একইসঙ্গে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আর আশঙ্কার কথা জানিয়ে সালমা বলেন, বেসরকারি খাত নিয়েও সরকারের চিন্তা করা উচিত।
স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীরা আশংকিত হলেও বিদেশী মালিকানার প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে কর্মরতরা অবশ্য এ নিয়ে খুব ভাবিত নন।
একটি বিদেশী কোম্পানিতে কর্মরত সাজ্জাদ বসুনিয়া বলেন, বেসরকারি খাতের চাপে পড়ার কোনো কারণ দেখি না। এই বেতন বৃদ্ধিতে আমি খুশি। তবে সরকাকে বিষয়টা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সাজ্জাদ বসুনিয়া এভাবে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও উল্টো কথা বলছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফৌজিয়া ইয়াসমিন। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এই বেতন বৃদ্ধির ফলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের উপর চাপ আসবে। প্রতিবারই এরকমটা দেখা গেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।
‘আমরাই আসলে সমস্যায় পড়বো,’ বলে মন্তব্য করেন ফৌজিয়া ইয়াসমিন।
তিনি এও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি চাকুরেদের মধ্যে সামাজিকভাবে আগে থেকেই একটা পার্থক্য ছিলো। এই পে স্কেল দেওয়ার পর সেটা আরো বাড়বে।
সামাজিক অসন্তোষের কথা উল্লেখ করে ফৌজিয়া বলেন, বেসরকারি খাতে বেতন-ভাতা না বাড়লে বেসরকারি খাতে কর্মরতদের মধ্য হতাশার সৃষ্টি হবে যা থেকে সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক অসন্তোষ।
একই সুরে কথা বললেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিপা সাহা। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, একবারে সরকারি চাকুরেদের বেতন দ্বিগুণ করায় এটা আমাদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। সব কিছুর দামই অনেক বেড়ে যাবে। বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাবে।
নিপা সাহা বলেন, বেতন বাড়বে শুধু সরকারি চাকুরেদের। কিন্তু বাজারের প্রভাব পড়বে সবার ওপর। কারণ দোকানদার তো জানবে বা চিনবে না যে আমি সরকারি নাকি বেসরকারি চাকুরিজীবী। সে আমার কাছ থেকেও সমান দাম নেবে।
বেসরকারি খাতের কর্মরতদের মাঝে এখন মানসিক হতাশা দেখা দিতে পারে এবং সামাজিক অসন্তোষও দেখা দিতে পারে উল্লেখ করে নিপা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে ব্যালেন্স করতে গিয়ে বেসরকারি খাতে কর্মরতদের কেউ কেউ অনৈতিক পথে চলে যেতে পারে।
হতাশ কেউ কেউ এমনও বলেছেন, ২১ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন বাড়ার ফলে সরকারের বছরে অতিরিক্ত যে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি টাকার দরকার হবে, সেটা কোনো না কোনোভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হবে। সবমিলিয়ে এটা মধ্যবিত্তের জীবনে প্রভাব ফেলবে।