দুই সপ্তাহ আগে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা আশঙ্কা করেছিলেন, সম্ভবত সেটাই হতে যাচ্ছে। তারা বলেছিলেন, ডেলটা বা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে কিছু দিনের মধ্যে অবস্থার অবনতি হতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে কঠোর লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, সে ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা গেছে। যার ফলে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে দেশে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাস নিয়ে শেষ ২৪ ঘণ্টার যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৯ হাজার ১৬৫টি নমুনা পরীক্ষার পর ২ হাজার ৩২২ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। শুধু শনাক্তের সংখ্যাই নয়, বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের।
পরিসংখ্যান বলছে, ৩৯ দিন আগে গত ৩০ এপ্রিল শেষবারের মতো শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছিল। ওইদিন ২ হাজার ১৭৭ জনের শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একইভাবে মৃত্যুও গত একমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছেছে। গত ৯ মে মৃত্যু হয় ৫৬ জনের। তারপর এই প্রথম ৪৪ জনের মৃত্যু হলো। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে গত ১ জুন ৪১ জন এবং ৫ জুন ৪৩ জনের মৃত্যুর হয়েছিল করোনাভাইরাসে।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন দেখা যাচ্ছে বেশির মানুষ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলারও কোনো বালাই নেই। রাজধানীর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুরো জেলা, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর কিছু এলাকায় লকডাউন দেওয়া হলেও সেসব এলাকার চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়। এসব এলাকাতেও মানুষকে পুরোপুরি সচেতন হতে দেখা যায়নি।
একইভাবে গত প্রায় দুই মাস হলো সারাদেশে সার্বিকভাবে যে বিধিনিষেধ চলছে, তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না বলেই বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। কেননা এতে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখছেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উদ্যোগ না নেওয়া হলে সামনের দিনগুলোতে অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আমাদেরও আশঙ্কা।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে সীমান্ত জেলাগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় অক্সিজেন ও হাসপাতালে শয্যা সঙ্কটের কথাও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবুও মানুষের টনক নড়ছে না কেন? মৃত্যুকেও ভয় পাচ্ছে না মানুষ!
আমরা মনে করি, দিনের পর দিন এই অবস্থা চলতে পারে না। করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। কেননা সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কমে আসছে সুযোগও।