সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সোনর বাংলা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক শ্লোগানে এ বাজেট পেশ করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা, এছাড়াও এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। কর বহির্ভুতখাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। আর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আমরা জানি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এবারও সংসদে বিরোধীদলের উপস্থিতিতে এ বাজেট পেশ করা হয়েছে। খাতওয়ারী বাজেটের পাশাপাশি প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছর (২০১৯-২০২০) থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। শুধু তাই নয়, সাহসী উচ্চারণে আরো বলেছেন, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা একটা বড় দিক বটে।
এসবের বাইরে বাজেটে বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্বর্ণ আমদানিতে শুল্কহার ভরি প্রতি ১ হাজার টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সিগারেট-বিড়িসহ তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোরও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে।
যদিও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে দাবি করেছে বিএনপি। আর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি বলছে, বাজেট সামগ্রিকভাবে বাস্তবতার নিরিখে হয়নি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নেই বলেও মত প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তবে আওয়ামী লীগ তার মতো করেই বাজেটের পক্ষে আনন্দ মিছিল করেছে। দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোও সামিল সেখানে।
আমরা মনে করি প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের কল্যাণ এবং দেশের উন্নয়নে যে পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে হবে। তা হবে দেশবাসীর জন্য কল্যাণকর। তবে আমরা অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি রাষ্ট্রের রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতি আর লুটপাট নামের শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এদেরকে রুখতে হবে, তবে সময়টা হবে বাংলাদেশের।