চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সম্রাট আকবরের ডাক্তার খোঁজ এবং টিএসসির সান্ধ্যআইন

সম্রাট আকবরের রাজপ্রাসাদে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে। সম্রাট বীরবলকে ডেকে বললেন- ‘বীরবল, আমি চাই এমন একজন ডাক্তার নিয়োগ দাও যার হাতে কোনো রোগী মারা যায়নি।’ বীরবল অভয় দিয়ে বলল- ‘একদম চিন্তা করবেন না জাঁহাপনা। এমন ডাক্তার আনবো যার হাতে জীবনেও রোগী মারা যায়নি।’

আকবর বললেন- এমন ডাক্তার পাবে কী করে। বীরবল কলার নেড়ে বলল- বুদ্ধি জাঁহাপনা বুদ্ধি। এমন বুদ্ধি খাটাবো যে ভারতবর্ষের সবচে ‘ইনোসেন্ট’ ডাক্তার বের করে নিয়ে আসবো।

আকবর খুশি হলেও চিন্তায় পড়ে গেলেন। কোনো ডাক্তার তো স্বীকার করবে না যে সে রোগী মেরেছে। তাহলে বুঝবে কী করে? বীরবলকে বললেন- ‘আমাকে  একটু খুলো বলো বীরবল। কিভাবে তুমি ইনোসেন্ট ডাক্তার বের করবে।

বীরবল ব্যাখ্যা করলো। আমরা ডাক্তারকে একটা মাত্র প্রশ্ন করবো। সেটা হলো, আপনার অপারেশন  থিয়েটারে কি ভূতের উপদ্রব আছে? ভূতের উপদ্রব থাকলে ডাক্তাররা বলবেন, হ্যাঁ আছে। আমরা তাকে তালিকা থেকে বাদ দিব। এভাবে যে ডাক্তারের চেম্বার, অপারেশন থিয়েটার ও বাড়িতে ভূতের উপদ্রব নেই সেই ডাক্তারকে নিয়োগ দিব। সেই মূলত ইনোসেন্ট ডাক্তার।

আকবরের মাথায় কিছু ঢুকলো না। ভূতের উপদ্রবের সাথে ডাক্তারের  ইনোসেন্স এর কী সম্পর্ক? বীরবল খোলাসা করলো। ‘জাঁহাপনা, অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারের হাতে যে রোগী মারা যায় সে ভূত হয়ে যায়। যার অপারেশন থিয়েটারে ভূতের উপদ্রব আছে সেই ডাক্তার অপারেশন করতে গিয়ে রোগী মেরে ফেলেছে। যার চেম্বারে ভূতের উপদ্রব আছে, সে চেম্বারে রোগী মেরেছে। যার বাসায় আছে, সে বাসায় রোগী মেরেছে। যার কোথাও ভূতের উপদ্রব নেই সেই কোথাও রোগী মারেনি।’

ব্যাখ্যাটা সম্রাট আকবরের খুব পছন্দ হলো। বললেন, ‘দ্রুত ভূতের উপদ্রবহীন ডাক্তার খুঁজে আনো।’

রাজ্যময় চষে বীরবলের বাহিনী ইনোসেন্ট ডাক্তার খুঁজে আনলো। চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার আগে আকবর ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। আকবরের বিশাল রাজসভায় ডাক্তারকে ডাকা হলো। সম্রাট তাকে বললেন, ‘আপনার সব খোঁজ খবর নিয়ে আমার ভালো লেগেছে। আপনি একটা রোগীও কোনোদিন মারেননি। বিষয়টা সত্যিই খুব আনন্দের। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার মূল প্রাসাদের পাশেই আপনার থাকার জায়গা করবো। বলুন কেমন প্রাসাদ আপনার পছন্দ।’

ডাক্তার ডানে-বামে তাকিয়ে কুর্নিশ করে নিচু গলায় বলল: “জাঁহাঁপঁনাঁ, প্রাঁসাঁদ ট্রাঁসাঁদ লাঁগবেঁ নাঁ। মাঁঝাঁরি সাঁইজেঁর এঁকঁটাঁ তেঁতুঁল গাঁছ হঁলেইঁ হঁবেঁ।”

উক্ত গল্পের সাথে ‘নিরাপত্তার অজুহাতে রাত আটটায় টিএসসি ত্যাগের নির্দেশেরও কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও যদি কেউ মনে করেন, নিরাপত্তার আশঙ্কায় যারা টিএসসিতে এমন অদ্ভুত আইন জারি করছেন আসলে তাদের হাতেই টিএসসি বেশি অনিরাপদ, সে দায় একান্তই পাঠকের।

রাত আটটায় টিএসসি ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি টানতে গিয়ে টিএসসির পরিচালক বলেন, কর্তৃপক্ষ চায় না ওরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে কেবল সংগঠন করুক। আর টিএসসিতে কিছুটা নিয়ম-শৃঙ্খলারও দরকার আছে। শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতেই এই নোটিশ।

পরিচালকের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এখন আর কোনো সংগঠন করবে না। আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবে না। চা খেয়ে টাকা নষ্ট করবে না। ছাত্ররা এখন এত এত পড়বে যে আগামী বছর বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক নাম্বারে উঠে যাবে। চা-বিস্কিট না খেয়ে সেই টাকা জমিয়ে জমিয়ে বিশ্ব ধনীর তালিকা দখল করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।আক্ষেপেরে বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের এত উন্নয়ন ছাত্রদের দেখার সুযোগ হবে না। কারণ ততদিনে কোনো ছাত্রের ঘাড়ে মাথা থাকবে না। ‘মাথা ব্যথায় মাথা কেটে ফেলো’ নীতিতে বিশ্বাসী কর্তৃপক্ষের অধীনে কোনো ছাত্রের ঘাড়ে মাথা থাকবে?