সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটে গেছে সাম্প্রদায়িক হামলা। বাড়িতে আগুন, মন্দিরে হামলা সহ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এসবের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা। সাম্প্রতিক এসব হামলার প্রতিবাদে এবার রাস্তায় নামলেন দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিউনিউয়ের রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে টিভি সংশ্লিষ্ট ১৪টি সংগঠনের শিল্পী ও কুশলীদের জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।
‘ঐতিহ্য ও কৃষ্টির এই দেশে, থাকি সবাই মিলেমিশে’— স্লোগান নিয়ে রাজপথে প্রতিবাদে অংশ নেন অভিনয়শিল্পী মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান, শমী কায়সার, তারিন, ইরেশ যাকের, দীপা খন্দকার, শাহেদ আলী সুজন, আহসান হাবিব নাসিম, মীর সাব্বির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে গোলাম কুদ্দুছ, সম্প্রীতির বাংলাদেশের সভাপতি পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিচালক গাজী রাকায়েত, সালাহউদ্দিন লাভলু, চয়নিকা চৌধুরী, শিহাব শাহীন, কামরুজ্জামান সাগর, পিকলু চৌধুরী, নাট্যকার মাসুম রেজা, দেবাশীষ বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী জয় শাহরিয়ার, গীতিকার মাহমুদ মানজুরসহ অনেকেই।
এই প্রতিবাদ সমাবেশে এফটিপিও’র চেয়ারম্যান ও গুণী অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। এদের রুখতে এটাই আমাদের প্রথম সমাবেশ, কিন্তু এটাই শেষ নয়। আমরা চাইবো, এই ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন- কবি, শিল্পী বা মিডিয়ার অন্যান্য কলাকুশলী সবাই এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হবেন। ভবিষ্যতে আমরা এই অপশক্তিকে পরাজিত করতে পারবো। কারণ অতীতেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব অপশক্তিকে আমরা পরাজিত করেছি, একাত্তরে যেমন করেছি- এরপরেও বহুবার আমরা এসব রুখে দিয়েছি।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বক্তৃতায় বলেন, ‘এই দেশে মানুষ বহুকাল ধরে সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্য নিয়ে বসবাস করে আসছে। কেউ চাইলেই তা বিনষ্ট করতে পারবে না। এই দেশে সহিংসতা আর উগ্র সাম্প্রদায়িকার জায়গা নেই।’
অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এমন ঘটনা দেখে ব্যক্তি হিসেবে খুব কষ্ট হয়। প্রতিবাদ যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না। ক্ষমতার রাজনীতি থেকে সরে এসে উন্নত সমাজ তৈরি করতে না পারলে আমরা কেউই নিরাপদ না।
ডিরেক্টরস গিল্ড এর সভাপতি, নির্মাতা ও অভিনেতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, সংস্কৃতি চর্চার যে জায়গা ছিলো, সেটা এখন আর আগের মতো নেই। আমরা দেখেছি, সন্ধ্যা হলেই পাড়া কিংবা মহল্লায় গান, থিয়েটার কিংবা নাটক সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিলো। এগুলোর চর্চা কমে যাচ্ছে বলেই মানুষের মধ্যেও সম্প্রীতির চর্চাও কমছে। অপশক্তি রুখে দেয়ার পাশাপাশি এসময় তিনি দেশব্যাপী সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর কথাও বলেন।
নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, সম্প্রীতি নষ্টের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশকে বিভাজন করা হচ্ছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এটা করার চেষ্টা করছে। আমরা শিল্পীরা যাদের জন্য কাজ করি, তাদের মধ্যেই যদি সম্প্রীতি না থাকে, তাহলে আমাদের কাজের মূল্য নেই। সেই জায়গা থেকেই সশরীরে আজকে শিল্পী ও কলাকুশলীরা সম্প্রীতির জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। কারণ আমাদের শরীর রক্তাক্ত হয়েছে কুমিল্লাতে, আমাদের শরীর রক্তাক্ত হয়েছে নোয়াখালিতে, আমাদের শরীর রক্তাক্ত হয়েছে রংপুরে। বলা যায়, পুরো দেশ রক্তাক্ত হয়েছে। আর এগুলো হয়েছে ধর্মের নামে। এগুলো রুখতে হবে।