আরব দেশগুলোর সম্পর্কচ্ছেদ করার সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য’ বলে উল্লেখ করে এ সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করেছে কাতার।
জঙ্গিবাদে সমর্থন দেয়া এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে সোমবার কাতারের সঙ্গে সব ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং বাহরাইন। এর প্রেক্ষিতে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে কাতার সরকার বলেছে, ‘পদক্ষেপগুলো অন্যায্য এবং এমন সব দাবি ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেগুলো নেয়া হয়েছে, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।’
তবে সম্পর্কচ্ছেদ করার ওই সিদ্ধান্ত কাতারের নাগরিক এবং অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে কোনোরূপ প্রভাব ফেলবে না বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
‘এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট, কাতারের ওপর নিজেদের খবরদারি চাপিয়ে দেয়া। শুধু এটা বিবেচনা করলেই সিদ্ধান্তটি কাতার রাষ্ট্রটির সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায়,’ বিবৃতিতে বলেছে কাতার সরকার।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানায়, রিয়াদ কাতারের সঙ্গে তাদের স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ সীমান্ত এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এসপিএ জানায়, উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদ থেকে সৌদির জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিশরও কাতারের সঙ্গে আকাশসীমা এবং সব বন্দর পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করেছে।
ইউএই থেকে কাতারের কূটনীতিকদেরকে দেশ ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আবুধাবির অভিযোগ, দোহা জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা এবং বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে সমর্থন, অর্থায়ন এবং মদদ দিচ্ছে। ইউএই’র রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়্যাম এ কথা জানায়। দেশটির রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন কোম্পানি ইতিহাদ এয়ারওয়েজ মঙ্গলবার থেকে কাতারে সব ধরণের ফ্লাইট বন্ধ করে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে অন্যান্য এয়ারলাইনগুলোর পক্ষ থেকে আলাদা কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।
অন্যদিকে নিজেদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কাতারের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বাহরাইন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, কাতার ‘বাহরাইনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নড়বড়ে করে দিচ্ছে এবং এর অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।’
বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে এর কূটনৈতিক মিশন তুলে নেবে। এ সময়ের মধ্যেই সব কাতারি কূটনীতিককে বাহরাইন ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
ইয়েমেনের হাউদি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধরত সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট থেকেও কাতারকে বের করে দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কাতারের কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসবাদকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও আল-কায়েদা ও আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনকে মদদ দেয়া এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগও তোলা হয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন এ জোটটি দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে ইরানের সমর্থনপুষ্ট হাউদি বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছিল। কাতারকে এভাবে জোট থেকে বের করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা প্রসঙ্গে ইরান বলছে, আরব দেশগুলোর নেয়া এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কট নিরসনে কোনোরকম সাহায্য করবে না।
ইরানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা, দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হামিদ আবুতালেবি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া সঙ্কট নিরসণের উপায় নয়। তিনি আরো বলেন, ‘আগ্রাসন এবং দখলদারিত্ব অস্থিরতা ছাড়া আর কিছু দিতে পারে না।’