২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরের ঘটনার পর থেকে সরকারের সঙ্গে এক প্রকার সমঝোতার মধ্য দিয়ে চলছে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব। সংগঠনের যেকোনো সিদ্ধান্ত ও অনুদানের অর্থের হিসাব-নিকাশ সবই দেখভাল করছেন আল্লামা শফী পুত্র ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা আনাস মাদানী। গত তিন বছরে হেফাজতের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আনাস মাদানী।
শফী পুত্রের সম্পদের পাহাড় গড়া আর নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের কিছু বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রবাসী ব্যারিস্টার ও ব্লগার নিঝুম মজুমদার।
শফী পুত্রের হাটহাজারী সদরের ঈদগাহ মাঠের দক্ষিণে পাশাপাশি তৈরি হওয়া পাঁচটি ভবন এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা লিচু তলায় এগারো শতক জমির উপর রয়েছে চারতলা সুপরিসর ভবন নিয়ে সম্প্রতিকালে কিছু সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
নিঝুম লিখেছেন, খুব সম্ভবত ফেসবুকেই পড়েছিলাম কোনো এক পত্রিকার লিংক ধরে। প্রিয় অভিজিৎদা’র নামে প্যারিসে একটা রাস্তার নাম করা হয়েছে। জেনেছিলাম সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে। প্যারিসের রাস্তা ঘাট তো তেমন চিনিনা। অন্ধের যষ্ঠীর মত সাথে ছিলেন নাহিদ ভাই। সাথে ছোট ভাই মনোয়ার। আমাদের মধ্যে নাহিদ ভাই প্যারিসবাসী সুতরাং তিনিই সাহায্যের জন্য সামনে আগায়া আসলেন। বাংলাদেশ হাই কমিশন হচ্ছে হেনরী মার্টিন রোডে। এরই মধ্যে বাপ্পী ভাই ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছেন টেক্সট করে। সেই সম্বল নিয়ে আমরা এক সন্ধ্যায় খুঁজতে শুরু করলাম অভিজিৎ রায় কে। প্যারিসের রাস্তায় এক আঁধো আলোর সন্ধ্যায় আমরা বাঙালি তিন যুবক খালি খুঁজি…
খুঁজি আর খুঁজি কিন্তু অভিজিৎ রায়কে আর পাইনা। তিনজন তিন দিকে খোঁজা শুরু করলাম। ভিক্টর হুগো এভিনিউ বলেন, ফ্ল্যান্ড্রিন বুলভার্ড বলেন, রু ডি ক্যাম্পস সবখানে খুঁজলাম। পাইলাম না অভিজিৎদা’কে। খুঁজতে খুঁজতে আমাদের তিনজনের পা তখন ভয়ানক ব্যাথা। আমার অবস্থা বেশী খারাপ। আমার বাম পায়ে আর্থরাইটিসের ব্যাথা বহুদিনের। তারপরেও পা টেনে টেনে খুঁজেছি। এক পর্যায়ে হতাশা নিয়া ঘরে ফিরলাম। পেছনে পড়ে রইলো “অভিজিৎ দা এই প্যারিসের কোথাও নাম ফলক হিসেবে রয়েছেন” এমন এক আশা।
ঘরে গিয়া অনলাইনে আবার খুঁজলাম। এইবার জানা গেলো অভিজিৎদা’র নামে একটা নাম ফলক রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডার নামে একটা সংগঠন লাগাইসিলো ঠিকি কিন্তু সেটা সাময়িক ভাবে। তারমানে আমরা খামাখাই খুঁজেছি সেই রাস্তায়। কিন্তু কেন জানি মনে হয়নাই খামখা খুঁজেছি। যতবার যত গলির সামনে দূর থেকে একটা সাইনবোর্ড দেখেছি, কাছে যেতে যেতে মনে হইসিলো ওইখানেই অভিজিৎদা একটা নাম ফলকের মধ্যে নিষ্পলক মুচকি হাসি দিয়া আমার দিকে তাকায়া ছিলেন।
সেইদিন রাতে একটা গলিতে অভিজিৎদার নাম আশা করসিলাম কিন্তু সেই রাতে আমার অবচেতন মন “প্যারিসের প্রতিটা রাস্তায় অভিজিৎদা থাকতে পারেন”, এমন একটা আশার জন্ম দিয়া দিসেন।
আমরা যেই তিনজন অভিজিৎদা’রে খুঁজলাম আমরা তিনজনের কেউই নাস্তিক ছিলাম না। আমাদের মধ্যে মনোয়ার দুই ডীগ্রি বেশী মুসলিম। আমরা দুইজন ফাঁকিবাজ মুসলিম। কিন্তু এসব ধর্ম, জাত, পাত, উনার লেখা, উনারে নিয়া অপঃপ্রচার কিছুই আমাদের শরীরে বিঁধে নাই। আমরা একজন খুন হয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজসিলাম প্যারিসের রাস্তায়। অন্যায় ভাবে খুন হওয়া একজন মানুষ।
আজকে সংবাদ পত্রে দেখলাম আল্লামা শফীর পূত্র আনাস এক বছরে ঠিক কতটা সম্পদের মালিক হইসেন। এইতো গত সপ্তাহে জানলাম শফী হুজুরকে রেল ওয়ের ৩২ কাঠা জমি (নাকি বিঘা?) দিয়া দেয়া হইসে। শফী হুজুর এখন বাণী দিয়া বেড়ান, “ছাত্রলীগ ভালো, আওয়ামী লীগ ভালো”
আসলে কাউরে কিছু বলার নাই। দুঃখ নাই, ক্ষোভ নাই, হতাশা নাই, বিষাদ নাই। কেমন যেন ভাবলেশহীন। তবে মনের ভেতর একটা গোপন ঘৃণা মাঝে মধ্যে চিলিক মাইরা যায়। আমার যেহেতু তেমন কোনো ক্ষমতা নাই কিংবা সরকারের সাথে লড়ার অমন প্রতিপত্তি নাই, তাই আমি সেইসব ঘৃণা উগড়ায়া দেই আমার মত। আমি সেইসব ঘৃণায় অভিশাপ দেই।
আজ এখানে দাড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ
দিয়েছিলো সেঁটে,
মগজের কোষে কোষে যারা
পুঁতেছিলো আমাদেরই আপনজনের লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত…
আমি তাদের অভিশাপ দিচ্ছি…অভিশাপ…