সামাজিক মাধ্যম ইউটিউব এবং ফেসবুকে একজন ভ্লগার আছেন যিনি তার একটি ভ্লগে ঢাকা শহরের ভবনগুলোকে ঘামাচির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ভূমির উপরে নির্মিত গায়ে গায়ে লাগানো ভবনগুলোকে এর চেয়ে ভালভাবে কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না।
উন্নয়নের নামে, সাধ্যের অতিরিক্ত মানুষকে বাসস্থানের সুযোগ করে দিতে রাজধানীতে কেবল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা শহর এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর অন্যতম। অথচ গত দশ বছরে দেশের মরুময় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উত্তরবঙ্গের শহর রাজশাহী সবচেয়ে পরিচ্ছণ্ন শহর হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে। দিনে দিনে আরো সবুজ হচ্ছে দেশের শিক্ষানগরী।
সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে নির্ণিত ঢাকা’র দূষণ কমানোর জন্য কোন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের কথা না জানা গেলেও রেস্তোরা ও হাঁটার রাস্তা নির্মাণের জন্য শহরের প্রাণকেন্দ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে!
পাঠ্যপুস্তকে পড়েছি, বাসযোগ্য পরিবেশে একটি ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ ভূমিতে গাছপালা বা বনভূমি থাকতে হবে। ঢাকা শহরের কত শতাংশ ভুমিতে গাছপালা আছে সেটা নগর পিতারা জানেন?
ঢাকা শহরে খাবারের দোকানের অভাব পড়েছে? নগরবাসী কি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোস্তোরাঁর দাবিতে অবরোধ করেছেন? তাহলে কার পকেট ভরতে নগরীর পায়ে কুড়াল মারা হচ্ছে? নগরীর বাসযোগ্যতা বাড়াতে রাজধানীর পালনকর্তারা কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন সেগুলো জানাবেন কি?
উদ্যানের ভেতরে হাঁটার রাস্তা বানাতে হবে কেন? রাজধানীর কোন রাস্তাটা হাঁটারযোগ্য রেখেছেন?
ঢাকা শহরের অনেক রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করে দেখেছি। সে এক যুদ্ধ বটে। বেশীরভাগ ফুটপাথই হাঁটার অনুকূল নয়। নির্মাণ ত্রুটি আছে বেশীরভাগ ফুটপাথে। কিছুদূর হাঁটতে গেলে বার বার ওঠানামা করতে হয়। ফুটপাথের উচ্চতা দেড়-দুই ফুট। কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশী। বয়স্ক ও শিশুরা এত চড়াই উৎরাই পার হয়ে হাঁটবে কীভাবে?
হাঁটার আরো বিড়ম্বনা আছে। ফুটপাথ হকার বা ভ্রাম্যমাণ দোকানের দখলে। কিছুদিন পর পর হকার উচ্ছেদ হয় কিন্তু সেটা করা হয় তাদের জন্য বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা না করে। অবৈধ পার্কিংও হাঁটার পথ দখল করে রাখে ঢাকা শহরের অনেক এলাকায়।
ঢাকা শহরের ফুটপাথগুলো উন্মুক্ত সৌচাগারও বটে। নগরের ভদ্রলোকেরা (!) যত্রতত্র প্যান্টের জিপার খুলে দাঁড়িয়ে যান প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। পাবলিক টয়লেটের কয়েক গজ দূরেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার দৃশ্য খুবই সাধারণ বিষয় এই ঢাকা শহরে।
মানুষের হাঁটার সুযোগ করে দিতে জনবান্ধব ফুটপাথ বানান, হকারমুক্ত করেন উদ্যানের ভেতর হাঁটার রাস্তা বানানোর দরকার নেই। বিশ্বাস করেন, উদ্যানের ভিতরে মানুষ মাটির রাস্তাতেই হাঁটতে বেশী পছন্দ করে।
গাছ না কেটে যতটুকু সবুজ আছে তা সংরক্ষণ করুন। সবুজ বাড়ানোর জন্য যেখানে যতটুকু জায়গায় সম্ভব গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেন। পরিবেশবান্ধবন ভবন নির্মাণে নগরবাসীকে উৎসাহিত করেন। পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণে প্রয়োজনে পুরষ্কারের ঘোষণা দেন। সরকারী নির্মাণে ভবনের চারপাশে গাছ লাগানোর জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক করেন।
এখনই ছোট ছোট এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করেন, দু’দশ বছর পর প্রাণের এ শহর সবচেয়ে দূষিত এলাকা থেকে বাসযোগ্য নগর হয়ে উঠবে।
উদ্যানের গাছ কেটে খাবারের দোকান বানানোর মতো আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন দয়া করে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)