সবুজ ইউনুসের নতুন বই ‘১৯৭১: মার্চ এবং ডিসেম্বর’ বইটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ১ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ এবং ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত প্রতিদিনের ঘটনার খণ্ড খণ্ড চিত্র।
বাংলার বাণীতে ১৯৯৯ সালে মার্চ মাসে ২৬ দিনের ঘটনাবলী ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ শিরোনামে আর ‘চূড়ান্ত বিজয়ের পথে’ শিরোনামে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘটনাবলি ছাপা হয়।
বাংলার বাণীতে প্রকাশিত ধারাবাহিক সেই লেখাগুলোই কমবেশি সংযোজন বিয়োজন করে প্রকাশ করা হয়েছে এই সংকলন। সবুজ ইউনুস বালাদেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি নিজেকে নানামুখী লেখালেখিতেও যুক্ত রেখেছেন।
‘১৯৭১: মার্চ এবং ডিসেম্বর’-এই বইটি সবুজ ইউনুসের অনবদ্য সংকলন গ্রন্থ। তিনি তার বুদ্ধি, মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে গ্রন্থটি সংকলন করেছেন। ইত্যাদি প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত বইটির দাম রাখা হয়েছে ২৭৫ টাকা। সবুজ ইউনুস আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে নজরকাড়া প্রতিবেদন করায় ২০১২ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার অর্জন করেন। একাডেমিক সার্টিফিকেটে তার নাম মো. ইউনুস আলী থাকলেও সবুজ ইউনুস নামেই তিনি লেখালেখি ও সাংবাদিক মহলে ব্যাপক পরিচিত।
বর্তমানে তিনি দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক এবং অনলাইন ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উন্নয়ন সাংবাদিকতার উপর দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনষ্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশনস (আইআইএমসি) থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। দেশে-বিদেশে সাংবাদিকতার উপর বহু প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
বর্তমানে প্রশিক্ষক হিসেবেও কখনো কখনো দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিকতার নানা প্রতিষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেই সাংবাদিকতা ও লেখালেখি শুরু। ১৯৯২ সালে দৈনিক বাংলার বাণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। এরপর মুক্তকন্ঠ, ভোরের কাগজ ও যুগান্তর পত্রিকায় দক্ষতা ও সুনামের সাথে সাংবাদিকতা করেছেন।
দৈনিক সমকালে প্রধান প্রতিবেদক, বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যশোর জেলার সুজলপুর গ্রামে জন্ম সবুজ ইউনুসের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। মার্চ ও ডিসেম্বর বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল দু’মাস। মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মার্চ মাসের ইতিহাস এই বইয়ের প্রথম অংশে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কিভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রাম রচিত হয়েছিল, কিভাবে বিজয়গাথাঁ রচিত হয়েছিল তা এই বইতে সাবলীল ও প্রাণবন্ত ভাষায় উঠে এসেছে। প্রতিদিনকার ঘটনা বৃত্তান্ত এ বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
যেকোন পাঠক বইটি পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপুর্ণ দু’মাস মার্চ এবং ডিসেম্বরের প্রতিদিনকার ঘটনাবলির চুম্বক অংশ জানতে পারবেন। পাকিস্তান সরকারের ছল চাতুরি এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ রয়েছে বইটিতে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার আবাল, বৃদ্ধ বণিতা কিভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা এক অনন্য ভাষায় ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কেমন ছিল তা জানা যাবে। বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার সাথে কোন কোন দেশ একাত্ততা প্রকাশ করেছিল তারও প্রমাণ রয়েছে এই গ্রন্থটিতে । স্বাধীনতা সংগ্রামকালে পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের ধারণাও পাওয়া যায়।
১৯৭১: মার্চ এবং ডিসেম্বর বইটি অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায় তখনকার ইসলামী দলগুলোর ভূমিকা। ২৫ মার্চের কালোরাত্রের নির্মম কাহিনীর এক জ্বলন্ত উদাহরণ এই সংকলন গ্রন্থ’। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণার খবর কিভাবে প্রচার হয়েছিল তার জ্বলন্ত স্বাক্ষী বইটি । ডিসেস্বর বিজয়ের মাস। ১৬ ডিসের বাংলাদেশের বিজয় দিবস।
পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ম্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় এই ডিসেম্বর মাসে। ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে। তারপর ভারতও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ভারতীয় মিত্র বাহিনী কিভাবে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলেমিশে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তার ইতিহাস রয়েছে বইটিতে।
ডিসেম্বর মাসের প্রতিটি দিন ছিল খুবই ঘটনাবহুল। বাংলাদশের কোথায় কেমন লড়াই হয়েছিল তার নিখুঁত চিত্র চিত্রিত হয়েছে বইটিতে। বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকাও বইটি পড়ে জানা যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার বীরত্বপুর্ণ কাহিনীর বর্ণনাা রয়েছে বইটিতে। ১০ই ডিসেম্বরের পর থেকে পাক হানাদার বাহিনী কিভাবে আত্মসর্মপন করতে শুরু করে তার বর্ণনা রয়েছে বইটিতে।
১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনী রাজাকার, আল বদর, আশ শামস বাহিনীর সহযোগিতায় কিভাবে বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করেছিল তার করুণ কাহিনী রয়েছে বইটিতে। ১৬ ডিসেম্বর ৯১ হাজার ৪৯৮ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের সহযোগী পরিবার বর্গসহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পুর্বাঞ্চলীয় প্রধান লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে দলিলে সাক্ষরসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন মিত্রবাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরার কাছে।
আর বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামে নতুন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। ‘কবিতায় ভালবাসায় বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘দেশের পাখি’ শিরোনামে আরও দু’টি বই রয়েছে সাংবাদিক সবুজ ইউনুসের।