নির্মাণের মোহে একঝাঁক স্বপ্নবান তরুণের ঝাঁপিয়ে পড়া এবং ভিজ্যুয়াল মাধ্যমকে আলাদা একটা ভাষা দিতেই ভাই বেরাদার নিয়ে তৈরি হয়েছিলো ‘ছবিয়াল’। সেসময়ে নির্মাণের পথে একসঙ্গে যাত্রা করেছিলেন বেশকিছু তরুণ। তৎকালীন সময়ে তরুণ নির্মাতা ফারুকীর স্বপ্ন সারথী হয়েছিলেন যারা তাদের একজন মাহমুদুল ইসলাম। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের আলোচিত অমনিবাস চলচ্চিত্র ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ নির্মাণের সঙ্গে যে এগারো জন যুক্ত আছেন, তারমধ্যে এই তিনিও একজন।
২০০৭ সাল পর্যন্ত অফিশিয়ালি তিনি ছিলেন ফারুকীর ছবিয়ালের সঙ্গে। এখন যে নেই এমন নয়! ছবিয়াল কোনো উদ্যোগ নিলেই এখনো সেই শুরুর মতোই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন সবার মতো। তবে অফিশিয়ালি ছবিয়াল ছাড়ার পর মাহমুদুল ইসলাম মনযোগ দেন বিজ্ঞাপন নির্মাণে। এখনো বিজ্ঞাপন নিয়েই মেতে আছেন তিনি। কিন্তু তার ফাঁকে ফাঁকে তিনি কাজ করে চলেছেন টিভি ফিকশনেও। যদিও এ মাধ্যমেও নিয়মিত নন তিনি। তারপরেও তার বেশকিছু কাজ দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ছবিয়ালে থাকতেই ২০০৫ সালে ‘আয়না’ নামে একটি ফিকশন তৈরি করেছিলেন মাহমুদুল ইসলাম। এরপর ২০০৬ সালে ‘হ্যাঁ/না’ নির্মাণ করেতো রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এখনো যা ইউটিউবে ট্রেন্ডিং লিস্টে পাওয়া যাবে। গল্প বলার ভঙ্গি, কাস্টিংয়ে মুনসিয়ানা ও নির্মাণ কৌশল সব মিলিয়ে ফিকশনে মোটামুটি হাত পাকা তার। সর্বশেষ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আলোচিত ‘ডুব’ ছবিতেও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। ছিলেন সেকেন্ড ইউনিটের ডিরেক্টর।
এসবতো গেল তার অর্জন কিংবা অতীত অভিজ্ঞতার গল্প। বর্তমানের ব্যস্ততা কী নিয়ে, কিংবা ইমপ্রেস টেলিফিল্মের অমনিবাস চলচ্চিত্র ‘ইতি তোমারই ঢাকা’য় যুক্ত হলেন কীভাবে এবং কেনো?-এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলো নির্মাতাকে।
উত্তরে চ্যানেল আই অনলাইনকে মাহমুদুল ইসলাম বলেন: গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে টুক টাক ভালোই শর্টফিল্ম তৈরি হচ্ছে। সংখ্যার দিক থেকে। ইউটিউবে প্রচুর শর্টফিল্ম দেখা যায়। কিন্তু এরমধ্যে কতো পার্সেন্ট আপনি কমপ্লিট বা মান সম্মত শর্টফিল্ম খুঁজে পাবেন! প্রপার শর্টফিল্ম অন্তত আমি খুঁজে পাইনি। তো ইমন(আবু শাহেদ ইমন) একদিন অমনিবাস চলচ্চিত্রের আইডিয়াটা যখন বললো তখন আমি ভাবলাম আরে! এটাতো একটা ইউনিক আইডিয়া। পৃথিবীতেও এমন প্রজেক্ট খুব বেশী হয়নি। ‘প্যারিস আই লাভ ইউ’ নামে এরকম একটা প্রজেক্ট হয়েছে। একই ছবির প্রডিউসার বেশ কয়েক বছর পর ‘নিউইয়র্ক আই লাভ ইউ’ নামে আরেকটা প্রজেক্ট করেছিলেন। তো এরকম অ্যান্থলজি এবং সিটি বেইজ প্রজেক্ট আমাদের এখানে প্রথম। ইমন যখন আমাকে এমন আইডিয়া শোনালো তখন আমি ভাবলাম, এ ধরনের কোলাবরেশন হয় না। ঢাকা শহরে আমরাতো ইনডিভিজ্যুয়ালি কাজ করি, বন্ধু বান্ধবের সাথে হলেও কাজের ক্ষেত্রে এমন কোলাবরেশন হয়ই না। ‘ইতি তোমারই ঢাকা’র জন্য ফাইনালি যখন এগারো জনকে চয়েজ করলো এবং আমরা একসঙ্গে আইডিয়া নিয়ে বসলাম। এই বসাতে বিরাট একটা কাজ হলো। যার ফলই হতে যাচ্ছে ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ প্রজেক্টটি। এরজন্য ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও ইমনের প্রতি কৃতজ্ঞ।
‘কোলাবরেশন’কে এই প্রজেক্টের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক আখ্যা দিয়ে এই নির্মাতা আরো বলেন: প্রথম মিটিং থেকে একেবারে দৃশ্য ধারনে স্পটে যাওয়া পর্যন্ত এই এগারো জন নির্মাতা প্রত্যেকে প্রত্যেকের তরে অন্তপ্রাণ ছিলেন। সবাই সবার স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে ডিটেইল ধারনা রাখতেন। একটা গল্পেরতো হাজার রকমের দিক থাকে, ডাইমেনশন থাকে। দেখা গেল আমার গল্পের হয়তো একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক আমি ধরতে পারছি না, যা আমার ভাবনার চেয়ে সেটা আরো পোক্ত। কিন্তু সেটা অন্যজন ঠিকই ধরতে পেরে আলোচনা করেছে, বলছে। মানে প্রত্যেকের স্ক্রিপ্ট নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ কিংবা এমন কোলাবরেশন বাংলাদেশে আমি এর আগে দেখিনি। সবাই সবার ইগো ঝেড়ে ফেলে কাজটা শুরু করি। আর এই কোলাবরেশন তৈরি করতে ইমন যে রোলটা প্লে করেছে এটা বলে বোঝানো সম্ভব না। সে সব সময় সব বিষয় উপর থেকে দেখেছে। এগারোটা গল্পকে একটা গল্পে দেখানোর স্বাদটা দর্শককে পাইয়ে দেয়ায় এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। এন্ড উই হোপ সেটা আমরা করতে পারছি।
চলতি মাসের ১২ ও ১৩ তারিখে ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ চলচ্চিত্রে নিজের অংশের শুটিং শেষ করেছেন মাহমুদুল ইসলাম। কোন ধরনের গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছেন? এমন প্রশ্নে নির্মাতা বলেন: এটা মূলত ইমোশনাল ড্রামা। গল্পে একজন প্রধান চরিত্র। যে ঢাকা শহরে সেকেন্ডহেন্ড গাড়ির ব্যবসা করে। তার লাইফ নিয়ে একটা ইমোশনাল গল্প আমি দেখাবো। যেখানে অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, ইন্তেখাব দিনার ও স্নাতা শাহরিন।
গল্প, দৃশ্য ধারন ও কাস্টিং নিয়ে বেশ সন্তুষ্টই দেখা গেল নির্মাতাকে। বিশেষ করে কাস্টিংয়ের প্রশংসা করে এই নির্মাতা বলেন: আমি গল্পটা যখন ভাবি তখনই আমার মাথায় ছিলো ইন্তেখাব দীনার ও শতাব্দী ওয়াদুদ। শুটিংয়ে আমি তাদের কাছ থেকে যতোটা চেয়েছিলাম তারচেয়ে ঢের বেশিই পেয়েছি। সিচুয়েশন বুঝে তাদের যে মুভমেন্ট তা অসাধারণ।
প্রসঙ্গত, ‘স্বল্পদৈর্ঘ্যে দীর্ঘ যাত্রা’ স্লোগানে তরুণ ১১ নির্মাতাকে নিয়ে শুরু হয় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের আলোচিত অমনিবাস চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রজেক্ট ‘ইতি তোমারই ঢাকা’। পুরোদমে চলছে সিনেমার শুটিং। ১১ জন নির্মাতার মধ্যে ৫ জন তাদের শুটিং ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। এই মাসের মধ্যে বাকিগুলোও শেষ হয়ে যাবে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন অমনিবাস চলচ্চিত্র প্রকল্পটির ক্রিয়েটিভ প্রডিউসারের দায়িত্বে থাকা নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন।