সবাই আমাকে মানসি চিল্লারের হারিয়ে যাওয়া বোন বলতো: ঐশী
‘মিস ওয়ার্ল্ডের মুকুট অনেক মূল্যবান। সেটা আমি পাইনি। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা, দোয়া আমার কাছে ওই মুকুটের চেয়ে কম মূল্যবান নয়’
পিরোজপুরের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী এখন বাংলাদেশে ও দেশের বাইরের পরিচিত মুখ। ক’দিন আগে ৬৮ তম বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় আসরে ১২০টি দেশের মধ্যে ফাইনালে লাল সবুজের পতাকার প্রতিনিধি হয়ে লড়েছেন ঐশী। এই ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’-এর প্লাটফর্ম বদলে দিয়েছে ঐশীর জীবন। চীনের সানাই শহরে মিস ওয়ার্ল্ডের ফাইনাল মঞ্চে প্রথম বাংলাদেশী হয়ে ইতিহাস গড়া ঐশী শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) তার জার্নির কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…
মিস ওয়ার্ল্ডের ফাইনালে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই ভালো?
রাইট। আমি সারাজীবন এ দিনটির কথা ভুলবো না। যতদিন বাঁচবো ওইদিনের স্মৃতিটুকু বয়ে বেড়াবো।
সেখানকার যে কোনো একটা বিশেষ স্মৃতি শেয়ার করুন…
কতো স্মৃতি কোনটা রেখে কোনটা বলি! গতবারের মিস ওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়ার মানসি চিল্লারের সঙ্গে আমার ভীষণ সখ্যতা হয়। আমি তাকে দিদি বলে ডাকতাম। মানসী দিদি আমার এক্সট্রা কেয়ার নিতেন। আমরা হিন্দিতে কথা বলতাম। তার সবচেয়ে পছন্দের প্রতিযোগী ছিলাম আমি। বাকি প্রতিযোগীরা আমাকে (মানসি’স লস্ট সিস্টার) মানসির হারিয়ে যাওয়া বোন বলতো। খুব আদর করতেন আমাকে। চলে আসার আগের রাতে পার্টিতে তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি মানসি দিদিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সারাবিশ্বের এতো সব প্রতিযোগীর মধ্যে তুমি আমাকে এতো পছন্দ এবং কেয়ার নাও কেন? আমাকে বলেছিলেন, কে কি বলেছে তুমি কখনো পাত্তা দাওনি। তুমি তোমার কাজ করে গেছো। পোশাক, চেহারা, ব্যবহারে তুমি তোমার মতো ছিলে। সেজন্য আমি তোমাকে বেশী পছন্দ করি। মানসি দিদি আরও একটা কথা বলেছেন, আমি লাইক ইয়োর কনফিডেন্স অলয়েজ বি লাইক দ্যাট।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হতে না পেরে খারাপ লেগেছিল সে মুহূর্তে?
মিস ওয়ার্ল্ডের মুকুট অনেক মূল্যবান। সেটা আমি পাইনি। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা, দোয়া আমার কাছে ওই মুকুটের চেয়ে কম মূল্যবান নয়। মুকুট পাইনি তাতে কি, মানুষ আমাকে ভোট করেছে, দোয়া করেছে ভালোবাসা দিয়েছে এটা ভেবে খারাপ লাগা কাজ করছিল না। প্রথমে আমার মধ্যে ভীষণ নার্ভাসনেস ছিল। আসতে আসতে সেটা কাটিয়ে উঠি। আর একটা কথা বলতে চাই, যতটুকু আমি ভাবিনি, সেখানে তার চেয়ে বেশী করেছি। এটা সত্যি যে, দিন শেষে ফলাফলটাই ফ্যাক্ট। কিন্তু এর মাঝে যে প্রশংসাগুলো আমি পেয়েছি, মিস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ আমাকে যে সম্মান দিয়েছে সেটা আমার কাছে অনেক বড় অর্জন।
মিস ওয়ার্ল্ডের বিশ্বমঞ্চে লড়াইয়ের জন্য আপনার প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল?
ওখানে যাওয়ার আগে আমার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল। তখন কিছুদিন বিশ্রামে ছিলাম। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। হাঁটাচলা করতে পারিনি। সেসময় গ্রুমিংয়ে কিছুটা ঘাটতি হয়। মিস ওয়ার্ল্ডের আসরে গিয়ে ম্যানার, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক সবকিছু শেখার জন্য আমি সময় সংকটে পড়ি। প্রতিযোগিতার মূল থিম ‘বিউটি উইথ দ্য পারপাস’। এই অসুস্থতার কারণে বিউটি উইথ পারপাসের একটি ভিডিও থাকে, সেটা করতে পারিনি। আসলে সময় পাইনি, শরীরও সায় দেয়নি। পরবর্তীতে যে আসবে সে যেন অবশ্যই নিজের এসব প্রজেক্ট তৈরি করে সেখানে যান। আমার প্রজেক্ট রেডি ছিল, কিন্তু অসুস্থতার কারণে ভিডিও বানাতে পারিনি। এই ভিডিও অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে। শেষ কথা হলো, আমি অসুস্থ না হলে আরও অনেক ভালো করতে পারতাম এটা নিশ্চিত।
এবার বলেন সামনের দিনগুলো নিয়ে কী ভাবছেন?
উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) দিয়েই ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় যোগ দেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। একটা ভালো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়াটা ঠিকভাবে চালাতে চাই। সবার আগে এটাই আমার কাছে প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি মিডিয়ার কাজে একটু আধটু নিজেকে জড়াতে চাই। মিডিয়ায় কাজের শখ আমার রয়েছে। সময় ও সুযোগ পেলে করবো। আত্মনির্ভরশীল হবো। সামাজিক কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে।
অন্তর শোবিজ কর্তৃপক্ষের উপর কি আপনার পরবর্তী পথচলা নির্ভর করবে?
অন্তর শোবিজের স্বপন চৌধুরী স্যার আমার অভিভাবক। আমি এই অন্তর শোবিজের একজন সদস্য। একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি আমাকে নির্দেশনা দিতেই পারেন। ভুল-ত্রুটি করলে ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু নির্ভর করার বিষয় কারও ক্ষেত্রে আসে না। আমার ১৮ বছর বয়স হয়ে গেছে। আমার সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারবো। আমার একটা পরিবার রয়েছে। অন্তর শোবিজের কথার বাইরে কোনো কাজ করতে পারো না এমন কোনো বাইন্ডিংস নেই।
নাটক-সিনেমা এ দুটো মাধ্যমের কোন মাধ্যমে আপনার কাজের ইচ্ছে বেশী কোথায়?
ইচ্ছে আছে সব কাজই করবো। তবে কাজটা ভালো হতে হবে। যেখানে নিজ দেশের সংস্কৃতি উঠে আসবে, যে কাজের মাধ্যমে মানুষ নতুন কিছু শিখতে পারবে আমি সেই কাজগুলো করবো। তবে চলচ্চিত্র অনেক বড় মাধ্যম, দেশের সংস্কৃতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। এখানে কাজের জন্য মন বেশী টানে।
কেমন ধরণের চলচ্চিত্রে কাজ করতে চান?
ওই যে বললাম দেশের যেসব সিনেমা ভিনদেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরবে সেই ধরণের ছবিতে কাজ করতে চাই। কারণ আমি আমার দেশ ও দেশের সংস্কৃতিকে অনেক বেশী ভালোবাসি।
সর্বশেষ সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছেন এমন দুটি ছবির নাম বলুন।
‘চালবাজ’ এবং ‘পোড়ামন-২’।
চলচ্চিত্র ও নাটকে তিনজন করে অভিনেতার নাম বলেন। যাদের অভিনয় আপনার ভালো লাগে।
শাকিব খান, আরিফিন শুভ এবং চঞ্চল চৌধুরী। আর নাটকে অনেকেই রয়েছেন তার মধ্যে মোশাররফ করিম, অপূর্ব এবং আফরান নিশোর অভিনয় ভালো লাগে।
প্রথম ছবিতে নায়ক হিসেবে যদি শাকিব খানকে পান কেমন লাগবে? তার সঙ্গে আপনার একবার দেখা হয়েছিল…?
প্রথমেই আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করব, খুশি অবশ্যই হবো। তবে ছবিটা দেখে যেন মনে হয় এটা বাংলাদেশের ছবি, বাংলাদেশের গল্পের ছবি। শাকিব খান ছাড়া যাদের নাম বলেছি তাদের সঙ্গে সেভাবে পরিচয় নেই। আগে থেকেই শাকিব খান আমার অনেক পছন্দের একজন নায়ক। গত অক্টোবরে ভাইয়ার সঙ্গে চট্টগ্রামের ইউনেস্কো সিটি সেন্টারে একটি ফ্যাশন হাউজ উদ্বোধন করেছিলাম। এটা স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এখন যারা আছেন তার মধ্যে শাকিব খানের বিকল্প নেই। আশা করিনি এতো তাড়াতড়ি তার সঙ্গে আমার দেখা হবে এবং তার সঙ্গে একটা ফ্যাশন হাউজ উদ্বোধন করব। তাকে দেখে আমি নার্ভাস ছিলাম, লজ্জা পাচ্ছিলাম। সেসময় ওইভাবে আলাপ না হলেও হায়/হ্যালো হয়েছিল। তাকে সালাম দিয়েছিলাম। আমাকে তখন পাশ থেকে বলছিল শাকিব খান কি বেশী রিজার্ভ মাইন্ডের? আমি বলেছিলাম তেমন কিছুই না। আমি লজ্জায় রাঙা হয়ে যাচ্ছিলাম। মোরাল, হি ইজ অ্যা ভেরি নাইস পার্সন।
আপনার আগামী দিন সুন্দর হোক…
ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন। আমাকে এতোদূর যারা নিয়ে এলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আশা করি সবাই আমার পাশে থাকবেন।