দেশের সফটওয়্যার খাতের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ২০১৬-১৯ মেয়াদে কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন নিয়ে প্রচার- প্রচারণা চালাচ্ছে দু’টি প্যানেল।
তবে প্যানেলের বাইরে এসে আগামী ২৫ জুনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আইসফটওয়্যার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী খন্দকার আবদুল হাফিজ।
বেসিস-এর কয়েকটি সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয় নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে একাই লড়ছেন তিনি।
কেনো প্যানেল রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন?
চ্যানেল আই অনলাইনের এমন প্রশ্নের উত্তরে হাফিজ বলেন, ‘সবাই দেশের সফটওয়্যার খাতের কল্যাণে কাজ করতেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবুও বৈরীতা এড়িয়ে সকল সদস্যের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার সদিচ্ছা এবং দেশে আইটিখাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থীতা করছি।’
দেশে আইটি নির্ভর দক্ষ জনবল গড়ে তোলা গেলে প্রযুক্তিখাতে বিদেশমুখীতা কমবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দেশের তরুণরা এখন প্রযুক্তি প্রাচুর্যের দখল নিতে প্রস্তুত। তরুণদের পরিশ্রমকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া গেলে দেশেই হতে পারে ‘সিলিকিন ভ্যালি। মেধায় আমাদের তরুণরা ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম নয়।’
কথাকে কাজে রূপ দিতে বেসিস’র সাধারণ সদস্যদের জন্য ১১টি কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন হাফিজ। পরিকল্পনাগুলোর উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অগ্রসরমান সফটওয়্যার খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণের শর্ত। প্রচলিতভাবে ঋণ নিতে গেলে এখনো সম্পদ মর্টগেজ রাখতে হয়। অথচ এইখাতে আমাদের সম্পদ কিংবা মূলধন হচ্ছে আমাদের মেধা। তাছাড়া প্রতিমাসে ভাড়া বাড়ে এজন্য অনেক উদ্যোক্তা-সদস্যকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাদের জন্য স্বল্পমূল্যে অফিস স্পেস বরাদ্দকে প্রাধান্য দিতে চাই। বেসিস সদস্যদের চমৎকার পরিবেশে কাজ করার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া দরকার। বেসিস-এ আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মানানসই একটি বিশেষায়িত জোনের খুব দরকার। সফটওয়্যার আউটসোর্সিং-এর লেনদেনগুলো সহজ করতে সদস্যদের বহুদিনের দাবি PayPal সুবিধা দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের সফটওয়্যারখাতে গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
সাম্প্রতিক রিজার্ভ হ্যাক এবং বাংলাদেশের আইটি সুরক্ষা নিয়ে কী ভাবেন?
চ্যানেল আই অনলাইনের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বড় বড় কাজে বিদেশমুখীতায় দেশে সফটওয়্যারখাত ঠিক শিল্পে পরিণত হচ্ছে না। দেশকে এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে। মাত্র ২-৩ মাস প্রশিক্ষণ দিলেই সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ গড়ে ওঠে না। এটা হাতে-কলমে শেখার দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। এটা করতে হলে বিদেশী সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কোম্পানি স্থাপনে উৎসাহিত করতে হবে। এতে করে দেশে দক্ষ জনবল তৈরি হবে।’
সরকার শুরু থেকেই তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এমন অনুকূল পরিবেশে বেসিস কিভাবে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে?
চ্যানেল আই অনলাইন তা জানতে চাইলে হাফিজ বলেন, ‘প্রথম কাজ হবে দেশের সফটওয়্যার খাতে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ডাটাবেইজ বা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা। বেসিস-এর কোন সদস্য কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। সরকারি উদ্যোগ এবং কাজে সকল সদস্যদের প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য এসোসিয়েশনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এখাতের সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।’
সফটওয়্যারখাতে খন্দকার আবদুল হাফিজ:
বাংলাদেশের তথ্য ব্যবস্থায় প্রযুক্তি ছোঁয়া লাগে ষাটের দশকে কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনার মাধ্যমে এবং নব্বইয়ের দশকে তা ব্যাপকতা লাভ করে। নব্বই দশকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশে তথ্য প্রযুক্তি পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য সফটওয়্যার তৈরি ও উন্নয়ন এবং ১৯৯৭ সাল থেকে রপ্তানিযোগ্য মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হয়।
তথ্য-প্রযুক্তিখাতে খন্দকার আবদুল হাফিজের পদচারণার শুরুটাও সেই ১৯৯৭ সাল থেকে। এক পা দু’পা করে হাঁটতে শেখা বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তিখাতকে ক্রমশ পরিণত হতে দেখাদের একজন তিনি।
বর্তমানে ইমপ্রেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আইসফটওয়্যার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন হাফিজ। এর আগে কাজ করেছেন দেশী-বিদেশী কয়েকটি তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বাংলাদেশী আইটি প্রতিষ্ঠান এবং ভারতের প্রযুক্তি নগরী ব্যাঙ্গালুরুর ইনফ্রা সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।