সোমবার সন্ধ্যায় তুরস্কের আঙ্কারায় একটি আর্ট গ্যালারি পরিদর্শনের সময় এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছেন সে দেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভ। ইউটিউবসহ নানা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, খুনি তাকে গুলি করার পর চিৎকার করে বলছে,‘আল্লাহু আকবার, আলেপ্পোর কথা ভুলে যেও না, আলেপ্পোতে আমরা মরছি, তুমি এখানে মর’। সিএনএন তুর্কিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, হামলাকারী একাই ছিলো। ‘আমি এখান থেকে জীবিত ফিরবো না’ বলতেও শুনেছেন প্রত্যক্ষদর্শী। আমরা দেখেছি এ ধরণের আত্মঘাতী হামলাকারীরা মনে-প্রাণে এ কথায় বিশ্বাস রাখেন। রাষ্ট্রদূতের ওপর আট আটটি গুলি চালানো মেলভুট মার্ট আলটিনটাস তুর্কির রায়ট পুলিশের একজন সদস্য ছিলো। সে একাই হামলা চালালেও তার সাথে কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগাযোগ আছে কি না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তুর্কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তুর্কির প্রেসিডেন্ট এরদোগান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং ভিডিও বার্তায় বলেছেন,‘যারা তুরস্ক এবং রাশিয়ার ভেতর সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না’। সোমবার রাতটি সত্যিই এক ঘটনাবহুল রাত, সন্ত্রাসবাদের রাত। একইদিন আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাস আক্রমণের চেষ্টা করেছিল এক অস্ত্রধারী, যা সফল হয় নি। গ্রেফতার হয়েছে অস্ত্রধারী। বার্লিনে ক্রিস্টমাস মার্কেটে মানুষের ওপর লরি তুলে দেওয়ার ঘটনায় বহু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই ঘটনাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ বলেছেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান থেকে আসা এক অভিবাসী লরিটি চালাচ্ছিলো বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনার পর সেই অভিবাসী পালাতে সক্ষম হলেও পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে মস্কোতে নিজ বাসায় গুলিতে নিহত হয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। এই ঘটনাটি খুন না আত্মহত্যা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিরিয়াতে রুশ অভিযানের প্রতিবাদে তুরস্কে বিক্ষোভের একদিনের মাথায় এতগুলো ঘটনা। আর, সুইজারল্যান্ডের জুরিখে একটি মসজিদে ঢুকে গুলি চালিয়ে তিনজনকে গুরুতর আহত করেছে অন্য এক হামলাকারী যে এখনও পলাতক। সন্ত্রাসবাদ বিশ্ব নাগরিকদের জন্য এক ভীষণ আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ভাবনায় এখন নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে, এবং সে নিরাপত্তা মানুষের জন্য। কোন বিশেষ ধর্ম, গোত্র,বা জনগোষ্ঠী নয়। সন্ত্রাসবাদ দমনে সবাইকে এক হতে হবে। বাঁচাতে হবে মানুষকে। কোন রাজনীতির কূটচালে আজ সারা বিশ্বে এমন আতংক, এতো রক্ত, এতো মানুষের অনাকাংখিত মৃত্যু সে বিষয়টি আমাদের জানতে হবে। আর এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে বিশ্বের সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। যেকোন মূল্যে সন্ত্রাসবাদের শেকড় তুলে ফেলতে হবে। এই দায়িত্ব প্রতিটি দেশের, প্রতিটি রাষ্ট্রের। এখানে এককভাবে কোন কিছু অর্জন করার নেই। সম্মিলিতভাবেই মোকাবিলা করতে হবে ইতিহাসের এই জঘন্য ভাইরাসটিকে। হলি আর্টিজান যেমন আমাদের জন্য ছিল ‘অন্য’ এক বাংলাদেশ, ঠিক একইভাবে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নানা অর্জন আছে আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের। বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যে মডেল হয়ে উঠেছে, প্রয়োজনে তা অনুসরণ করুক সারা বিশ্ব, তেমনটাই আমরা আশা করি। রাজনৈতিক কারণে সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা বন্ধ হোক। প্রতিটি মানুষ বাঁচুক, তার স্বাধীনতায়, তার নিজস্বতায়- যেখানে ধর্ম আর ধর্মকে নিয়ে করা রাজনীতির কোন ঠাঁই হবে না।