অনেক বাবা-মা তার শিশু সন্তানকে সম্পত্তি মনে করেন, শাসনের নামে নির্যাতন করেন। কিন্তু সন্তান সম্পত্তি নয়। দেশের প্রচলিত আইনে শিশুর নিজেরই সুরক্ষা পাবার আইনগত অধিকার রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ।
‘ডাইভারশন ফ্রম দ্য পুলিশ স্টেশন আন্ডার দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট ২০১৩’ শীর্ষক কর্মশালায় হাইকোর্টের এ বিচারপতি এই মন্তব্য করেন।
ইউনিসেফের সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস আয়োজিত কর্মশালায় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ আরো বলেন: এখন সময় এসেছে মা বাবাকে আইনের মধ্যে নিয়ে আসার।
তিনি আরো বলেন: শিশুদের ক্ষেত্রে রেস্টিটিউটরি জাস্টিসকে বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থাৎ শাস্তি না দিয়ে তাদের সংশোধনের পন্থায় নিতে হবে।
এসময় এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ৪৩ মাসে সারা দেশে ৯৬৮ জন শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
আজকের কর্মশালায় সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস- এর চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন: শিশুরা ক্রাইম করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। ক্রিমিনাল (অপরাধী) হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তারা ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। এর জন্য দায়ী কে সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। একটা শিশু কখন খাবার চুরি করে? যখন তার পেটে খাবার থাকে না তখন। অনেক সময় মা-বাবার সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশু খারাপ পথে চলে যায়। তাই শিশুকে কোর্ট কাচারিতে পাঠানো সমীচিন নয়, বিকল্প পন্থায় তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন: শিশুরা খারাপ পথে যায়, খারাপ কাজ করে, চুরি করে, মারামারি করে, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো একটা কারণ আছে। যার জন্য আমি বলবো যে, আদৌ শিশুরা এই খারাপ কাজ বা খারাপ ব্যবহারের জন্য দায়ী নয়। শিশুরা মারামারি করে কারণ তাদের পরিবারের মধ্যে মারামারি হয় বলে এটাকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নেয়। যে ঘরে দৈনন্দিন মারামারি হয়, সে ঘরে শিশুরা বড় হচ্ছে মারামারি দেখতে দেখতে। মারামারি তাদের জন্য কিছুই না।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন: আমি নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলাম সে দেশের শিশু বিচার ব্যবস্থা দেখার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখলাম ও জানলাম, থানা থেকেই উনারা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ শিশুকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আর যে ২৫ শতাংশ থাকে তাদের থেকে আবার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিশুকে ডাইভারশনের (বিকল্প পন্থায়) মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী কর্মশালায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন: আমাদের সর্বপ্রথম মনে রাখতে হবে, আমরা যাদেরকে নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি বা করছি তারা হচ্ছে শিশু। আপনারা সবাই জানেন শিশুরা নিষ্পাপ হয়, অবুঝ হয়। ঠিক চিন্তাভাবনা করে কোনো কাজ তারা করে না। এই কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। খারাপ পথে গেলে শিশুদেরকে কিভাবে ভালো পথে নিয়ে আসা যায় সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আর প্রবেশন অফিসার ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন- হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি খিজির আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত মো: সাইফুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (ইনস্টিটিউশন) মো. আবু মাসুদ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহেরীন প্রমুখ।