বাংলা ভাষার প্রতি সমাজের একশ্রেণীর অবজ্ঞা এবং বিকৃত উচ্চারণে বাংলা বলার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রক্ত দিয়ে অর্জিত ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিকৃতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বাংলার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষেরা যাতে নিজেদের মাতৃভাষার চর্চা করতে পারে সে ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা-বাঙালির স্বকীয় সংস্কৃতি বেশি বেশি প্রচার করতে গণমাধ্যমের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পেছনে ব্যক্তি ও সরকারের উদ্যোগ, জাতির পরিচয়ে ভাষা-সংস্কৃতির অবদান এবং মাতৃভাষা চর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে হয়। যেটি আমাদের সঙ্গে বারবার হয়েছে। ১৯৭১ সালে হানাদাররা আমাদের গৌরবের শহীদ মিনার গুড়িয়ে দিয়েছিলো। ১৯৭৫ এর পর আবার সেই ভাষা সংস্কৃতি আক্রান্ত হয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবার জাতির ইতহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়’।
বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগ তুলে ধওে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ বাংলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসেছি আমরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে বাংলায় ভাষণ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন’।
আজ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…’ একুশের এই সুর বিশ্বব্যাপী বাজছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পেছনে দুই প্রবাসী বাংলাদেশীর অবদান এবং তৎকালীন সময় তার সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, হারিয়ে যেতে বসা মাতৃভাষা রক্ষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন,‘বিশ্বের বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এমন ভাষাগুলো সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে এই উদ্যোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা আবার তা শুরু করি। আজ প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইউনেস্কো এটিকে ক্যাটাগরি-টু তালিকায় রেখেছে, যা একটি বড় অর্জন’।
প্রতিষ্ঠানটিকে দীর্ঘস্থায়িত্ব দিতে আইনকরা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ইন্সটিটিউটে গবেষণা কাজে অর্থ বরাদ্দ এবং সার্বিক কার্যক্রমে সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা ভাষার বর্তমান সংকট তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবী এখন একটি বৈশ্বিক গ্রাম। এখানে বহুভাষা শেখা দোষের কিছু নয় বরং এতে দক্ষতা প্রকাশিত হয়। কিন্তু কষ্ট হয় যখন দেখি, কেউ কেউ বাংলা ভুলে যাওয়াকেই বিরাট গুণের কাজ বলে মনে করে। সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে না পড়ালে যেনো ইজ্জতই থাকে না’।
এমন মানসিকতার প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার অনেকে বাংলা বিকৃত করে ইংরেজি উচ্চারণে বলার চেষ্টাকেও গৌরবের মনে করে। ভাষার বিকৃতি চাই না। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে’।
তিনি আরও বলেন,‘ যে ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে তার জন্য আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আমাদের একার মাতৃভাষা দিবস নয় বরং এটা একটি আন্তর্জাতিক দিবস। বাংলার গুরুত্ব আজ সবাই বুঝতে পারছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এখন মোবাইলে বাংলা লেখা যাচ্ছে। স্বল্প শিক্ষিত মানুষও এখন সহজে যোগাযোগ করতে পারছে’।
মাতৃভাষায় সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তির গ্রাস থেকে দূরে রাখার প্রত্যয় জানান প্রধানমন্ত্রী।