চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সত্যকে লুকিয়ে রাখা যায় না

সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জেনারেল জিয়াউর রহমান জড়িত বলে এত বছর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-দল দাবি করে এসেছে। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়াতেও বারবার উঠে এসেছে তার নাম।

কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া এবং দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কোনো ব্যক্তি প্রথমবারের মতো স্বীকার করে গেছেন, বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার নেপথ্য নায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান
চলতি বছরের ৬ এপ্রিল সুদীর্ঘ বছর পালিয়ে থাকার পর গ্রেপ্তার হওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ ফাঁসিতে ঝোলার আগে জবানবন্দি দিয়ে বলে গেছেন জেনারেল জিয়া পেছন কিভাবে কলকাঠি নেড়েছেন। কিভাবে খুনিদের পুরস্কার হিসেবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে।

ওই জবাবন্দিতে তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ‘‘১৫ ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান সাহেব ১০-১১ টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট অডিটরিয়ামে সব ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর জোয়ান এবং অফিসারদের এ্যাডড্রেস করেন। ওখানে উনি (জিয়াউর রহমান) মোটিভেট করেন যে, ‘এখন যে ঘটনা গত রাতে ঘটে গেছে তোমরা সে সমস্ত নিয়ে কোনো রকম মাথা ঘামাবে না। তোমরা সব চেইন অব কমান্ড এ ফিরে যাও। সবাই কাজকর্ম করো। এটা জাতির ব্যাপার এটা আমাদের ব্যাপার না।’’

আবদুল মাজেদ আরেক জায়গায় বলেছেন, ‘‘উনার (জিয়াউর রহমান) তাতে (বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে) সমর্থন আছে তা না হলে উনি আগ বাড়িয়ে এসব মোটিভেশন করবে কেন উনাদেরকে? উনার (জিয়াউর রহমান) তো সমর্থনই, এ তো পরিষ্কার কথা। এখানে সাবসিকুয়েন্স তার এ্যাকশন ই তো বুঝা যায়। এখানে ওদের প্রতি তো উনার (জিয়াউর রহমান) সমর্থন ওদের প্রতি।’’

এই জবানবন্দিই এতো বছর পর প্রমাণ করে জিয়াউর রহমান নিজেও জড়িত ছিলেন নৃশংস-জঘন্য এই হত্যাযজ্ঞে। প্রমাণ না থাকলেও সেই ঘটনার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছেন। খুনিদের পুনর্বাসন করেছেন, পুরস্কৃত করেছেন এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।

তার বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট হয়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে দিয়ে খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) জারি করিয়েছিলেন জিয়া। তার কয়েক বছর পর ১৯৭৯ সালে ক্ষমতায় এসে নিজেই সেই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছিলেন। যে কারণে দীর্ঘ ২১ বছরেও সেই হত্যাকাণ্ডে কোনো মামলা করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর পরিবার। ১৯৯৬ সালে সেই ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) বাতিল করে বিচার নিশ্চিত করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

শুধু জিয়াউর রহমানই নয়, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে সেই হত্যাকারীদের বছরের পর বছর বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গেছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে চূড়ান্ত পর্যায়ে বাধা তৈরি করেছিল বিএনপি সরকার। এসব ঘটনা এবং খুনি মাজেদের জবানবন্দি আজ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে ওই হত্যাকাণ্ডে তারাও জড়িত।

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িতদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু নেপথ্য নায়কদের বিচার হয়নি। কিন্তু বিচার না হলেও সেই চক্রান্তকারীদের নাম বেরিয়ে আসছে। আজ দিনের আলোর মতো পরিস্কার তাদের ভূমিকা। কেননা সত্যকে বেশি দিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সেই সত্যের আলোতে মানুষ চিনে নেবে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ।