দেশের জন্য জীবন বাজি রাখা মুক্তিযোদ্ধার আত্নহত্যার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সুইসাইডে নোটে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব খান লিখে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তাকে অপমান করেছিলেন যা তিনি সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করছেন। আসল ঘটনা কী জানতে গঠিত হয়েছে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি যার প্রধান এবং একমাত্র সদস্য ওই মন্ত্রণালয়েরই একজন যুগ্ম সচিব।
সচিব সম্পৃক্ত ঘটনায় তদন্তের দায়ভার কেনো তার অধস্তনকে দেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তার চেয়ে সিনিয়র কোনো সচিব কিংবা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ওই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিলো বলে তারা মনে করছেন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিষয়টা অযৌক্তিক। একজন সচিব সম্পৃক্ত ঘটনার তদন্তের দায়ভার কেন তার অধস্তন যুগ্ম সচিবকে দেওয়া হবে?
‘একজন সচিবের ঘটনায় তদন্তের দায়ভার অবশ্যই তার চেয়ে সিনিয়র কাউকে দিতে হবে। হতে পারে সেটা সিনিয়র কোনো সচিব বা কেবিনেট সচিব। তাদের দিয়েই এই তদন্ত করানো উচিত,’ বলে মনে করেন তিনি।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সাবেক সচিব ড. আকবর আলি খান মনে করছেন, বিষয়টির মধ্যে দুটি দিক আছে। একটা হলো, আদৌ ঘটনাটা ঘটেছে কি না বা কি ঘটনা ঘটেছে সেই বিষয়ে তদন্ত করা। আর অন্যটি হলো, এই ঘটনার সাথে সচিবের কতোটা সম্পৃক্ততা রয়েছে সেটা তদন্ত করা।
‘যদি সচিবের বিষয়ে তদন্ত করানো হয় তাহলে অবশ্যই সেই পদমর্যাদার কাউকে দিয়েই তদন্ত করাতে হবে,’ বলে তারও মত।
চ্যানেল অাই অনলাইনকে তিনি বলেন: অধস্তন কাউকে দিয়ে একজন সচিবের বিষয়ে তদন্ত করানো যাবে না। তদন্ত করতে হবে কেবিনেট সচিব বা উর্ধ্বতন সচিবকে দিয়ে।
তবে এখন কেবলমাত্র ঘটনার তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে, তাই এটা একজন যুগ্ম সচিবের হাতে অর্পণ করা হয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। ‘যখন সচিবের বিষয়ে তদন্তের কথা বলা হবে তখন নিশ্চয়ই অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে,’ বলেই মনে করেন দীর্ঘ সময় প্রশাসনের নানা দায়িত্ব পালন করা সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ, ক, ম মোজাম্মেল হক অবশ্য চ্যনেল আই অনলাইনের কাছে পুরো বিষয়টা পরিস্কার করেছেন।
তিনি বললেন: এখন ঘটনার বিষয়বস্তুর তদন্ত চলছে। এজন্য মুক্তিযোদ্ধার চিঠিটি পড়া হবে, তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলা হবে, কথা বলা হবে তার পরিবারের সঙ্গেও। পরিবারের অবস্থাও বিবেচনা করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
‘এখন শুধুমাত্র ঘটনার বিষয়বস্তু কি সেটা নিয়েই তদন্ত চলছে,’ বলে নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা অাইয়ূব খান চিরকূটে লিখেছেন, তিনি জেলা কমান্ড কাউন্সিল গঠন করার জন্য এখানে এসেছিলেন, কিন্তু আসলে জেলা কমান্ড কাউন্সিল গঠনের কাজ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের। সেই কাজে তিনি কেনো মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আসলেন তদন্তেই তা উঠে আসবে।
‘এই মন্ত্রণালয়ের সেই কমিটি গঠনের কোনো এখতিয়ার নেই। মন্ত্রণালয় ও কাউন্সিলের মধ্যে কাজের ব্যাপারেও কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও তিনি কেন এখানে আসলেন, সেটা একটা প্রশ্ন?,’ বলে মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।
তিনি বলেন: তার পরিবার নিয়েও তদন্ত করা হবে। পুলিশের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধার চিরকূটের কপি নেওয়া হবে। এরপর আসবে সচিবকে নিয়ে তদন্তের প্রশ্ন। তারপর তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
এ বিষয়ে রোববার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করবেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে সেদিন সময় কম থাকায় তাদেরকে আবার রোববার আসতে বলেন মন্ত্রী। সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-ও এ ঘটনায় তদন্ত করছে।