আগামী দুই দিন ব্যস্ততম সময় কাটাবেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক। নিজের জন্মস্থান পটুয়াখালীতে একাধিক প্রকল্প উদ্বোধন ছাড়াও বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। তার সফরে পটুয়াখালীতে এখন সাজ সাজ রব। তবে বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না আওয়ামী লীগ।
সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী, সচিব আবদুল মালেক ১০ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় বরিশাল থেকে সড়ক পথে পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হবেন। এরপর পৌণে ৯টায়তিনি পটুয়াখালী জেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত জেলা গেট উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের ভিত্তিপ্রস্তরও দেবেন সচিব।
সেদিনই বেলা ১০টার দিকে পটুয়াখালীর স্মৃতিসৌধ পুন:নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে তিনি পটুয়াখালী পৌরসভার পৌর অডিটরিয়ামের উদ্বোধন আয়োজনে যোগ দেবেন। এরপর পটুয়াখালীর উন্নয়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে পটুয়াখালী পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন আছে তার সফরসূচিতে।
বিকেল ৩টায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব।
এরপর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার লাবুপুরায় নিজের বাড়িতে রাত্রিযাপন করে পরের দিন অর্থাৎ ১১ অক্টোবরও বেশ ব্যস্ত দিন পার করবেন আবদুল মালেক।
সফরের দ্বিতীয় দিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে দুমকী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করবেন তিনি। এরপর সাড়ে ৯টায় পটুয়াখালীতে নির্মিতব্য ফুটওভারব্রিজের উদ্বোধন করবেন। কালিকাপুর যুব সংসদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন সকাল সাড়ে ১০টায়।
এরপর অ্যাডভোকেট কাজী আবুল হাশেম স্টেডিয়ামের উদ্বোধন এবং ১১টায় আবুল করিম মৃধা কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রেসক্লাব উর্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন সচিব আবদুল মালেক।
সচিবের পটুয়াখালী ভ্রমণ উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে পটুয়াখালী। শহর এবং অন্য জায়গাগুলোতে একেবারে সাজ সাজ রব। বানানো হয়েছে তোরণ, টানানো হয়েছে নানা শুভেচ্ছাবার্তা।
সচিবের দুই দিনের সফর উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সাজসজ্জার বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পৌর মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম এসব কার্যক্রম তদারকি করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সচিবের মতবিনিময় সভা ও শুভেচ্ছা কার্যক্রম প্রচারের জন্য প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাইক স্থাপন করা হয়েছে।
সচিবের আগমণ উপলক্ষে এতো সাজসজ্জার ব্যাপারে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পটুয়াখালীতে যে উন্নয়ন হয়েছে সেটা মূলত সচিব সাহেবের মাধ্যমেই হয়েছে। তাই জনগণ নিজেরা উদ্যোগী হয়ে নিজ নিজ এলাকায় এসব সাজসজ্জা করা হয়েছে। এজন্য পৌরসভা থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।’
তবে সচিবের এমন ব্যস্ততম সফরে বিস্মিত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী। তাদের মতে, মন্ত্রীর মতোই ব্যস্ত শিডিউল সচিবের।
‘আয়োজনও মন্ত্রী-মিনিস্টারের মতোই,’ বলে মন্তব্য করেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।
তাদের ধারণা, আগামীতে নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি হিসেবেই সরকারিভাবে তিনি এতো মহাযজ্ঞের আয়োজন করছেন।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। বারবার চেষ্টা করে সচিবের মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।
সচিব আবদুল মালেক ১৯৮৫ ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ২৮ জুন থেকে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন। এছাড়া, ১৯৯৮ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ২২ জুন পর্যন্ত তিনি সেসময়ের বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী খ.ম জাহাঙ্গীরের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। খ.ম জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়িও পটুয়াখালীতে।