শিশুকে সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তাদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে, দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে। শিশুরা যে বিষয়ে আগ্রহী সেই জগতে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ফেলে দিয়ে তাকে ভারবাহী প্রাণী বানানো যাবে না। কারণ প্রতিযোগিতার বোঝা বইতে বইতে শিশুর সৃষ্টিশীল মনটা মরে যায়। সে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে ঠিকই কিন্তু তারা সবাই সৃষ্টিশীল মানুষ হয় না। সৃষ্টিশীল মানুষ ছাড়া সমাজ হয়ে ওঠে পঙ্গু, বিকৃত। তাই শিশুকে প্রকৃতির কাছে নিতে হবে। সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে তাদের বড় করতে হবে।
সাংস্কৃতিক বিদ্যালয় ‘বাতিঘরে’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা সৃষ্টিশীল মানুষ গেড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে এসব কথা বলেন।
গত ৪ এপ্রিল চার বছর অতিক্রম করে বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়। ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শুক্রবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বসেছিলো বিদ্যালয়টির মিলনমেলা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ‘বাতি’দের সঙ্গে হাজির হন তাদের অভিভাবকরা। অনুষ্ঠানে একজন করে বাঙালি গুণি ব্যক্তির গান-কবিতা-নাটক ইত্যাদি নিয়ে একেক শাখার শিশুরা তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং চিত্রকর্ম উপস্থাপন করে। শিশুদের মনোজ্ঞ আয়োজন উপভোগ করতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী, নির্মাতা সারা যাকের, অভিনেতা আফজাল হোসেন, শিল্পী মুনিরুজ্জামান, জাদুশিল্পী বিপাশা আইচ প্রমুখ।
বাতিঘর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এর পরিচালক তামান্না সেতু জানান, এ বিদ্যালয়ের শিশুরা সংস্কৃতির প্রতিটি শাখার সঙ্গে পরিচিত হয়। কিন্তু এ শিশুরা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে সেটা লক্ষ্য নয়। সংস্কৃতিমনা মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাটাই মূল উদ্দেশ্য।
বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মেহদী হাসান সোয়েব জানান, শিশুদের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করা এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় করার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়। মাত্র ৫ জন শিশু এবং ৬ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা করে বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়।
‘‘৫ম বছরে এসে রাজধানীতে চালু আছে বিদ্যালয়টির ৫টি শাখা। বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও রয়েছে একটি শাখা। বাতিঘরে একশ’র উপরে শিক্ষকের তত্বাবধানে রয়েছে প্রায় তিনশ’ ‘বাতি’ (শিশু)।’’
প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করাতে শিশুদের মাসে একবার শ্রেণীকক্ষের বাইরে প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশী খাবারের সঙ্গে পরিচিত করাতে ঘরে বানানো খাবার এবং দেশী ফল দিয়ে শিশুদের টিফিন দেয়া হয়।
সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের পরিসরকে ছাড়িয়ে একটি মূল ধারার বিদ্যালয়ও শুরু করেছে বাতিঘর।