সংসার বলতেই মনে হয় স্বামী করবে রোজগার আর স্ত্রী করবে ঘরকন্যার কাজ। কিন্তু যুগ বদলে গেছে।
একসময় নারীরা বাজার সদাই করবে এটা কল্পনা করা যেত না। অথচ এখন সংসারের বাজার থেকে শুরু করে ছেলেমেয়েদের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে হয় স্ত্রীকে। সে হোক গৃহিনী বা চাকরিজীবী। স্ত্রীর এ দায়িত্ব পালনকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না বলে এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পারে না মানুষ।
ঘরের কাজের ক্ষেত্রে দু ধরনের চিত্র দেখা যায় পরিবারগুলোতে। স্ত্রী গৃহিনী হলে ধরেই নেয়া হয় রান্না করা, বাচ্চাদের দেখভাল, ঘরের তদারকি করতে আর কী পরিশ্রম হয়। শুয়ে বসেই দিন কাটে তার! অফিস করলে বুঝত পরিশ্রম কাকে বলে।
আবার চাকরীজীবীদের ক্ষেত্রে ক্লান্ত হয়ে অফিস ফিরে বিশ্রামের সুযোগ কম সংসারেই হয়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের স্ত্রীকে ঘরের কাজে ব্যস্ত হতে হয় অফিস থেকে ঘরে ফিরে। আর স্বামী ঘরে এসে টিভি, আড্ডা, কিংবা আয়েশ করে শুয়ে বসে বিশ্রাম করেন।
সংসারে এ অসামঞ্জস্যতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিকে কাটিয়ে উঠতে হলে স্বামীকে ঘরের কাজ করার জন্য চিন্তার পরিবর্তন করতে হবে সবার আগে। অফিস আর সংসারকে তুলনা করা ভুল। বরং সংসারের সুস্থ ও শান্তিময় পরিবেশ অফিসে কাজের ক্ষেত্রে মনকে সাবলীল রাখে। আবার সংসারের দায়িত্ব যে স্বামী-স্ত্রীর সমান তা বুঝতে হবে দুজনকে। এ জন্য নিজেরা দুজন যদি সুবিধামত কাজকে ভাগ করে নেয় তবে অশান্তিকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
এখনকার সময়ে বেশির ভাগ পরিবারে দুজনই চাকরিজীবী হয়। সেক্ষেত্রে অফিসের পর ঘরের কাজে স্বামীর সহযোগিতাতে স্ত্রীর উপর চাপ কমে।
আর সংসারটা শুধু স্বামী কিংবা স্ত্রীর একার নয়। দুজনের সুন্দর সাবলীল চিন্তা দিয়ে সুখী পরিবার গড়ে তোলার, সম্মিলিত প্রচেষ্টার একটা অংশ হলো ঘরের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করা।
স্ত্রীর ঘরের কাজে স্বামী যদি সাহায্য করে এতে শুধু যে শারীরিক বিশ্রাম হয় তার তা কিন্তু নয়। বরং স্বামীর ঘরের কাজে সাহায্য করাটা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। বলা যায় দুজনের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের ভিন্ন একমাত্র যোগ হয় এর মাধ্যমে ।
তাই দুজনের নিত্যকার রুটিন মাফিক জীবনে সম্পর্কের বৈচিত্র্যতা আনতে ঘরের কাজ সামলাতে হয় স্বামী স্ত্রী দুজনকে মিলে।
এর কারণ হলো, ব্যস্ত জীবনে নিজেদের মত করে সময় কাটানো জন্য এখন সময় পাওয়া খুব কঠিন। তাই অফিস ফিরে কিংবা ছুটির দিনে যে যার মত না থেকে একসাথে ঘরের কাজ করাটা কোয়ালিটি সময় কাটানোর একটা পন্থা। এতে নিজেরা একসাথে সময় কাটানোসহ আলাচারিতায় সুন্দর দিন পার করতে পারে। কাজটাও বোঝা বা চাপ বলে মনে হবে না স্ত্রীর কাছে।
অফিস ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধুদের আড্ডা সব নিয়ে এক ঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারে ঘরের টুকিটাকি কাজ। আবার এতে পরিবারের প্রতি বাবার দায়িত্ববোধ আর আগ্রহ থেকে সন্তানরা শিক্ষা পায়৷ তার নিজেদের জীবনে বাবার মতো হতে চেষ্টা করবে।
ছেলেমানুষ ঘরের কাজ করবে এটা আমাদের সংস্কৃতি বা সমাজের রীতিনীতিতে নেই। তাই কোনো ছেলে বউয়ের কাজে সহায়তা করলে হাস্যকর হয়! কিন্তু বিদেশে ছেলে-মেয়ে বলে কিছু নেই। তারা কাজ করে নিজের দায়িত্ব থেকে।
‘বউ পাগলা’ অপবাদ শোনার ভয়ে ঘরের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার মধ্যে কোন ভালোবাসার ছোঁয়া নেই। তার চেয়ে ভালোবাসা, মায়া মমতার বন্ধনকে অটুট রাখতে ঘরের কাজ করে অহংকার করা যায়। আর সর্গবে একজন পুরুষ বলতে পারে ‘ঘরের কাজের দায়িত্ব যতটা আমার স্ত্রীর, ঠিক ততটাই স্বামী হিসাবে আমার।’
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)