নব্বই দশকের একেবারে শেষ সময়ের ছবি ‘আম্মাজান’। কাজী হায়াৎ পরিচালিত এই ছবিটি ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ সাড়া ফেলে তৎকালীন সময়ে। এই ছবির মধ্য দিয়ে চিত্রনায়ক মান্না ও মায়ের চরিত্রে শবনমের অভিনয় গেঁথে আছে হাজারও বাঙালি দর্শকের মনে। সেই সাথে ছোট্ট চরিত্র হলেও বাঙালি দর্শককে কাঁদিয়েছে মান্নার সহচর হিসেবে অভিনয় করা ‘নবাব’ চরিত্রটি!
আম্মাজান ছবিতে নবাব চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করা সেই মানুষটির নাম জ্যাকি আলমগীর। কালের পরিক্রমায় রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ৫ নম্বর কেবিনে বসে নিভৃতে চোখের জল ফেলছেন এই অভিনেতা।
না। এটা কোনো চলচ্চিত্রের শুটিং দৃশ্যের বর্ণনা নয়। সত্যি সত্যিই হাসপাতালে নিরবে চোখের জল ফেলছেন এই অভিনেতা। চ্যানেল আই অনলাইনকে জানালেন তার বর্তমান দুর্দশার খবর।
হাসপাতালে ভর্তি কেন? জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, হার্টের সমস্যা। ডাক্তার ৫ মার্চ এনজিওগ্রাম করবে। এরপর জানা যাবে যে হার্টের জন্য বাইপাস করা লাগবে নাকি রিং পরালেই হবে। যদি রিং পরানো হয়, তাহলে খরচ কম। ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মধ্যেই সমস্ত খরচ হয়ে যাবে। আর যদি বাইপাস হয় তাহলে অনেক খরচ লাগবে। ডাক্তাররা বলেছেন, ১৪-১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন।
এরপর কিছুটা দম নিয়ে এই অভিনেতা বলেন, আমি প্রচুর ছবিতে অভিনয় করেছি কিন্তু ছোট ছোট চরিত্রে। আমাদের পারিশ্রমিকও খুব কম। নিজের সংসার চালিয়ে অর্থ জমানোর কোনো সুযোগ আমাদের নেই। যা আয় করি, সংসারেই খরচ হয়ে যায়। এখনতো সিনেমায় ই হয় না, তাই টাকা রোজগারের পথও বন্ধ। আর বয়সওতো অনেক হয়ে গেছে, কাজও খুব একটা পাই না। সংসার সামলাতেই হিমশিম খাই, চিকিৎসা করাবো কী দিয়ে?
ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, আমার কাছে যা ছিলো সব শেষ। গত এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন আছি, সব খরচ হয়ে গেছে। অনেক ঋণও করে ফেলেছি। সামনে এনজিওগ্রামের পর আমি কী করবো এখনো জানি না। চিকিৎসায় এতো টাকা খরচ করার সাধ্যি আমার নাই।
শিল্পী সমিতি কিংবা কোনো সংগঠনকে বর্তমান অবস্থা জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, না, তাদেরকে আমার সংকটের কথা বলিনি। শিল্পী সমিতি থেকে আমাকে দেখতে আসছিলো, কিন্তু আর্থিক কোনো বিষয়ে তারা আমাকে কিছু বলেনি। আমার দিক থেকে বলতেও আত্মসম্মানে লাগছিলো, তাই কিছু বলিনি। তবে টাকার জন্য অনেক জায়গায় নক করে রেখেছি। চেষ্টা করছি, দেখা যাক কী হয়!
তবে কথায় কথায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের কমিডিয়ান এই অভিনেতা আত্মবিশ্বাসের ভঙ্গিতে জানান, বিপদে পড়লে মানুষই মানুষকে উদ্ধার করে। কোনো সংগঠন হোক বা ব্যক্তি পর্যায়ে হোক কেউ না কেউ চিকিৎসায় আর্থিক অনুদান নিয়ে সামনে এগিয়ে আসবেনই। তিনি চান, সুস্থ হয়ে আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করতে।
আম্মাজান, লড়াকু,বাদশা ছবির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই কৌতুক অভিনেতা এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ তিনি শামীম আহমেদ রনী পরিচালিত মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘শাহেনশাহ’তে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন।