চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সংলাপের পথ ধরে গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক

কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। নতুন ইসি গঠনের বিষয়ে সোমবার ২০ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংলাপ শুরু হয়েছে।

দেশের মানুষ নির্বাচন পছন্দ করেন এবং ভোটের মাধ্যমে মতপ্রকাশ করার এই সংস্কৃতি দেশের গণতন্ত্রের জন্য আশাবাদের একটি জায়গা। আর এই নির্বাচন কার্য পরিচালনা করা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু বিগত কিছু নির্বাচনের কারণে জনমনে নানা আশঙ্কা আর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বতর্মান ইসির গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে খোদ ইসির ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। সেজন্য সামনের মেয়াদের ইসি বিভিন্ন কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথমবার ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়, চলে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বঙ্গভবনে পর্যায়ক্রমে মোট ৩১টি রাজনৈতিক দল এই সংলাপে অংশ নেয়।

এবারের সংলাপেও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত সব রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভা হবে। সভা থেকে নিশ্চয় ইতিবাচক কিছু একটা উঠে আসবে বলে আমাদের আশাবাদ।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতি ২০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এই সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশন গঠনে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে সিইসির জন্য দুইজন, চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮ জনের নাম প্রস্তাব করবে। পরে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত মোট ১০ জনের নামের তালিকা থেকে একজন সিইসি ও ৪ জন নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন রাষ্ট্রপ্রধান। বতর্মান ইসির মেয়াদ শেষ হবার পরদিনই নতুন কমিটি দায়িত্বগ্রহণ করবেন।

দেশে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের উল্লেখ করা আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও কোন সরকারই এ সংক্রান্ত কোন আইন প্রণয়ন করেনি। আইন প্রণীত না হওয়ায় ২০১২ ও ২০১৭ সালে দুই দফায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করেন নির্বাচন কমিশন। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এবারও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে এই পদ্ধতিতে।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এই সংলাপে অংশ নেবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে দলটির মহাসচিব জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির চিঠি পেলে দলে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। আমাদের আশাবাদ, দেশের স্বার্থে ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিসহ সব পক্ষ আলোচনার টেবিলে থাকবে একটি সুষ্ঠু ফলাফলের জন্য।

বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিভিন্ন আঞ্চলিক নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন ছিল, তা নিয়ে নানা মত ও আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। সব কথার এক কথা, জনগণ যেনো তাদের নাগরিক অধিকারের অংশ ভোট ঠিকভাবে প্রদান করতে পারে। সংলাপ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হওয়া নতুন ইসি সেই ভোটের পরিবেশ তৈরি করে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে আমাদের আশাবাদ।