চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সংরক্ষিত হোক ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন

বাংলাদেশে মহান ভাষা আন্দোলন জাতীয় চরিত্রের একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন। সূচনায় ছাত্র-আন্দোলন হিসেবে এর প্রকাশ ঘটলেও দ্রুতই তা দেশজুড়ে গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়, যার সূত্র ধরেই আসলে বাংলার মানুষের একটি আলাদা দেশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ভাষা আন্দোলনের এই অবদান জাতি ভুলতে না চাইলেও এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারের অভাবে বিকৃতি নয়তো হারিয়ে যেতে বসেছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ। শুধু ভাসার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই যেনো কিছুটা নড়েচড়ে বসা।

বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের দোতলায় ‘ভাষা আন্দোলন জাদুঘর’ রয়েছে। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন জাদুঘর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা খুব কম লোকেই জানেন এবং পরিদর্শন করে থাকেন। ভাষা আন্দোলন জাদুঘর পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। সেদিক থেকে এই জাদুঘরটি অনন্য। কিন্তু লেখক বা দর্শনার্থীরা যে ভাষা আন্দোলন জাদুঘরটি দেখবেন, তার সুযোগ খুবই কম। কারণ জাদুঘরের বাইরে চোখে পড়ার মতো কোনো সাইনবোর্ড নেই, প্রচারতো অনেক দূরের কথা। বলতে গেলে, জাদুঘরটি সারা বছরই থাকে দর্শকশূন্য। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে উদাসীনতা ও কম গুরুত্ব দেবার ক্ষেত্রে এটি একটি উদাহরণ মাত্র।

সম্প্রতি চ্যানেল আইতে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলির প্রতিবাদে প্রতিবাদী লিফলেট ছাপা হওয়া পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক ‘ক্যাপিট্যাল প্রেস’র ঐতিহাসিক মুদ্রণযন্ত্রটি সংরক্ষণের দাবি করেছে ক্যাপিট্যাল প্রেসের বর্তমান প্রজন্ম। সনাতনি পদ্ধতির ওই মুদ্রণযন্ত্রটি ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের উত্তাল সময়কে ধারণ করে আছে। যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রতিবাদের ভাষা অনুধাবন করতে সাহায্য করবে বলে আমরা মনে করি।

বাঙালি জনগণের মনে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আকাঙ্খায় জাগরণ সৃষ্টি করা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। সময়ের পরিক্রমায় এই গুরুত্বপূর্ণ পর্ব যেনো শুধু নির্দিষ্ট দিবস বা মাসে যেনো সীমাবদ্ধ না হয়, তা দেখা খুবই জরুরি। ভাষা আন্দোলনের দর্শন ও ত্যাগ যেনো জাতি যুগের পর যুগ ধরে রাখতে পারে, সেজন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যচিহ্নগুলো সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হবেন বলে আমাদের আশাবাদ।