ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা, যা কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়, তা বিলোপ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। ৩৭০ ধারার কারণে জম্মু ও কাশ্মীর অন্য যেকোন ভারতীয় রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্বশাসন ভোগ করতো। এই ধারাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই কাশ্মীর রাজ্য ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
ধারা ৩৭০ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেয়। এছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেয়।
কাশ্মীর নিয়ে কেন এত দ্বন্দ্ব:
কাশ্মীর হিমালয়ের একটি অঞ্চল যা ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই তাদের নিজেদের বলে দাবি করে। অঞ্চলটি একসময় জম্মু ও কাশ্মীর নামে একটি রাজ্য ছিল। তবে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ভারতের অধীনে পরে যায়। পরবর্তীকালে ভারত ও পাকিস্তান এই অঞ্চল নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল, এবং দুই দেশই যুদ্ধবিরতি লাইনের মাধ্যমে এই অঞ্চলটিকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।
ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের কারণে ৩০ বছর ধরে ভারতের প্রশাসনিক পক্ষ – জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে সহিংসতা চালিয়ে আসছিল।
আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই কাশ্মীরে নতুন করে কিছু বিষয় বেশ লক্ষ্যনীয়। সেখানে ১০ হাজারের মতো ভারতীয় সেনা মোতায়ন করা হয়েছে। তাদের প্রধান ধর্মীয় তীর্থ যাত্রা বাতিল করা হয়েছে,স্কুল, কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে , পর্যটকদের কাশ্মীর ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং কিছু আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
ভারতের সংবিধানের ৩৫-ক ধারা ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাই শুধুমাত্র সেখানে বৈধভাবে জমি কিনতে পারতেন, সরকারি চাকরি করার সুযোগ পেতেন এবং সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।
কিন্তু এটা বিলোপের মাধ্যমে কাশ্মীরের বাইরে বসবাসকারী ভারতীয়রা কাশ্মীরে জমির মালিক এবং চাকরি করতে পারবেন।
কাশ্মীর ও জম্বুর কাছে অনুচ্ছেদ ৩৭০ কেনো এত গুরুত্বপূর্ণ
এই ধারাটি কাশ্মীর ও জম্মুর কছে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে কাশ্মীর ও জম্মু ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি স্বায়ত্বশাসন ভোগ করে। জম্মু ও কাশ্মীরকে পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেয়।
ভারতের সরকার কি পদক্ষেপ নিচ্ছে
মূলত বর্তমানে কাশ্মীর ও জম্মুতে যে বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলছে তা বিজেপি সরকারের পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডার মধ্যে একটি। তাদের এজেন্ডায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে কাশ্মীর ও জম্মুতে ভারতের মতো একই সংবিধান এবং একই আইনের শাসন পরিচালিত হবে। এই রাজ্যের বাইরের মানুষ কাশ্মীরে চাইলেই জমি ক্রয়ের অনুমতি পাবেন।
সোমবার সকালে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কাশ্মীরকে যে মর্যাদা দেয়া হয়েছে তা বাতিলের সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
এই মর্মে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ স্বাক্ষরও করেছেন।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রীসভার ঐ বৈঠক শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একান্ত বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
কাশ্মীর স্বায়ত্তশাসন বিলোপের ঘোষণা, কতটা প্রভাব ফেলবে?
সংবিধান ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণার পর কাশ্মীরে মোতায়ন করা হয়েছে প্রায় এক লাখ সেনা। এই সিদ্ধান্তের ফলে সেখানে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন জম্মু এবং কাশ্মীর ‘ইউনিয়ন টেরিটরি’ বা কেন্দ্রীয়ভাবে শাসিত রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হবে। লাদাখ কেন্দ্রশাসিত তৃতীয় একটি এলাকা হিসেবে বিবেচিত হবে।
কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইট করেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে ভারতকে ঐ রাজ্যের দখলদার বাহিনী হিসেবে প্রমাণ করেছে।
ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর রাজ্যের পুরো অংশের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে, তবে উভয় দেশই সেখানকার অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে। গত তিন দশক ধরে ভারত শাসিত কাশ্মীরের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে।