মিষ্টি একটা একটা পরিচিত মিউজিক বেজে ওঠে। সুসজ্জিত মঞ্চে তখন আধো অন্ধকার। এমন আলোতেই তিনি এলেন, সাথে সাথে মঞ্চের সব আলো জলে উঠলো। কোনো কথা না বলে মিউজিকের সুর ধরেই চলে গেলেন গানে। কণ্ঠে উঠে এলো সেমি ক্লাসিক্যাল গান ‘মোহে রং দে লাল’ গানটি। প্রথমেই সুরের বন্যায় ভেসে গেল শ্রোতাদের মন। তারপর আরো একটি একইরকম গান। এবার ‘দিওয়ানী হো দিওয়ানী, দিওয়ানী হো গায়ি’ গানের মাধ্যমে মুগ্ধতা
ছড়াতে শুরু করলেন তিনি। গানের মাঝে বলে উঠলেন, ‘ভীষণ ভালো লাগছে আপনাদের সামনে গাইতে পেরে। যতবারই ঢাকায় এসেছি, ততবারই মুগ্ধতা নিয়েই ফিরেছি। এমন সমঝদার শ্রোতা পেলে কার না ভালো লাগে’। যিনি মুগ্ধতা ছড়াতে অভ্যস্ত তিনি বাংলাদেশের মতো শ্রোতা পেয়ে নাকি মুগ্ধ! এমন বিনয়ী কথা কেবল তাকেই মানায়। তিনি হলেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীয় বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশনের নবরাত্রি হলে জমে উঠেছিল ‘শ্রেয়া ঘোষাল মেলোডি নাইট লাইভ ইন ঢাকা’। আয়োজন করে অক্টোপি। সাথে ছিলো এটিএন ইভেন্টস। শ্রেয়া যখন মঞ্চে উঠেন ঘড়িতে তখন রাত ৯টা বাজে। পড়নে তার লাল স্যালোয়ার কামিজ। তার থেকে ঠিকরে বের হচ্ছিল লাল আভা। হল তখন শ্রোতায় পরিপূর্ণ।
দুটি সেমি ক্ল্যাসিকের পর শ্রেয়ার কণ্ঠে উঠে এলো রোমান্টিক ‘বাহারা বাহারা হুয়া দিল পেহলে বার হে’ গানটি। সামনে শ্রোতাদের মধ্যে তখন তুমুল করতালি। তারপর একে একে গাইলেন- আগার তুম মিল যাও, জাদু হে নেশা হে, ওয়াদা রাহা শিরোনামের গানগুলো।
গান শেষ হলে জানালেন এ আর রহমানের গানের প্রতি তার আসক্তির কথা। বললেন, ‘ছোটবেলায় আমার বাবা গানের ক্যাসেট এনে দিত। তখন এ আর রহমানের ‘রোজা’ ও ‘বোম্বে’ ছবির গান মুগ্ধ হয়ে শুনতাম।’
এরপর এ আর রহমানকে উৎসর্গ করে তারই কম্পোজ করা ‘ইশকে বিনা কেয়া জিনা ইয়ারো’, ‘রোজা জানে মান’, ‘জিয়া জলে জান চালে নেয়না তলে’ গানগুলো গাইলেন। দর্শক মুগ্ধতায় এ গানগুলো শুনলো।
বিরতি না দিয়ে শ্রেয়ার কণ্ঠে একে একে উঠতে লাগলো- কেয়সে মুঝে তুম মিল গায়ে, সাসো মে তেরি, মানওয়া লাগে লাগেরে সাভেরে, মে তেনু সামঝা বাকি গানগুলো। শ্রেয়ার গানের সুরের সাগরে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যেতে লাগলো শ্রোতারা। কখনো হাততালি কখনোবা মাথা দোলাতে দোলাতে তার গানের সঙ্গে তাল মিলাচ্ছিল শ্রোতারা। যেন সুরের ঝরণা বয়ে যাচ্ছিল পুরো হল জুড়ে আর তাতে গোসল করছিলেন শ্রোতারা।
এবার তিনি গাইলেন একটি বাংলা গান। অনুপমের গাওয়া শ্রেয়ার ভালোলাগা একটি বাংলা গান গাইলেন এবার। ‘মিলেছে সুর, মেলেছে ডানা’ শিরোনামের এ গানের পর আবার হিন্দি গান কণ্ঠে উঠে এলো। গাইলেন দুটি গান। এগুলো হলো- লাগলেন নজরে রে সে নজরে মিলে, মে মার জাওয়া। তারপর আবারও বাংলা এরপর আবারও হিন্দি গান। এভাবে প্রায় রাত ১১টা পর্যন্ত গাইলেন। শ্রেয়ার গানের মাঝে মাঝে কণ্ঠ দিয়েছেন এই আয়োজনে আরো একজন কণ্ঠশিল্পী কলকাতার কিঞ্জল চট্টোপাধ্যায়। দর্শক তখন বুদ হয়ে হয়ে রইল তার গানের রেশ ধরে। শ্রেয়া ঘোষাল যেন আগত প্রতিটি শ্রোতার মনমগজে কণ্ঠ জাদুতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন।
‘শ্রেয়া ঘোষাল মেলোডি নাইট লাইভ ইন ঢাকা’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন আমব্রিন। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে এতে আরও গান করেন মিফতাহ জামান, পিন্টু ঘোষ ও আনিকা।
ছবি : জাকির সবুজ