শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডের অনুষ্ঠানে ৩টি গির্জা ও ৩টি হোটেলে সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় ৪শ’রও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রায় ৮টি স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। ওই ঘটনার পর ওই এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক-টুইটারসহ সকল সামাজিক মাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে এ হামলার দায় এখনো কোন সংগঠন স্বীকার করেনি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সম্ভবত কোন একটি সংঘবদ্ধ দল এ হামলা করেছে।
কলম্বো ন্যাশনাল হসপিটালের পরিচালক ডা. অনীল জয়সিংহের বরাতে শ্রীলঙ্কার অন্যতম জাতীয় গণমাধ্যম কলম্বো টেলিগ্রাফ মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৪০২ জন আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হতাহতদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটক রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় নয়টি দেশের নাগরিক রয়েছেন বলে ওই হাসপাতালের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন বিবিসি।
কলম্বোর উত্তরে অবস্থিত নেগম্বোর কাটুয়াপিতিয়া এলাকার সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’স চার্চ প্রায় ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে প্রায় ১২ জনের মত নিহত হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে বলা হয় রাজধানীর উত্তরে অবস্থিত বাটিকালোয়া শহরের উপাসনালয়ে হামলায় প্রায় ২৭ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল ভবনের পাশে অবস্থিত হোটেল সিনামন গ্র্যান্ড হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
দেশটির গণমাধ্যম বলছে, রাজধানী কলম্বোর প্রায় আটটি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে তার বেশির ভাগ ছিলো আত্মঘাতি হামলা। ওই হামলাকারীদের আটক করতে গিয়ে প্রাণ গেছে তিন পুলিশ কর্মকর্তার।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কলম্বোতে বসবাস করা এক উসমান আলী বলেন, এখানে প্রত্যকে ওই হামলায় আহতদের সেবা করতে ধর্মমত নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছেন, অনেকে রক্ত প্রদান করছেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিক্রম সিং এক জরুরি মিটিং শেষে বলেন, ‘আমি এই করুণ সময়ে শ্রীলংকার সকল নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকল ধরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। খুব দ্রুতই আমরা দোষীদের সনাক্ত ও আটক করতে পারবো।’
স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর কোচচিকাড়ে এলাকার সেইন্ট অ্যানথনি’স ছাড়াও কলম্বোর উত্তরে অবস্থিত নেগম্বোর কাটুয়াপিতিয়া এলাকার সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’স চার্চ এবং রাজধানীর উত্তরে অবস্থিত বাটিকালোয়া শহরের আরেকটি উপাসনালয়ে ইস্টার সানডে উপলক্ষে আয়োজিত প্রার্থনা অনুষ্ঠানে কাছাকাছি সময়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে গির্জাতেই। এরপরই একে একে অন্য লক্ষ্যবস্তুগুলোতে বিস্ফোরণ হয়। কলম্বো টেলিগ্রাফ জানায়, সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তীব্র বিস্ফোরণে আশপাশের ভবনসহ পুরো এলাকা কেঁপে উঠেছিল।
এছাড়া কলম্বোর তিনটি প্রধান পর্যটন হোটেল দ্য শ্যাংরি লা, সিনামন গ্র্যান্ড এবং কিংসবারি হোটেলে বোমা বিস্ফোরণের তথ্য নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনটিই পাঁচ তারকা মানের হোটেল। কিন্তু এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনও জানা যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইতোমধ্যে বিস্ফোরণ পরবর্তী কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নেগম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’স চার্চের ভেতরের ছবি আছে কিছু। সেখানে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের ফলে ভেঙে পড়েছে গির্জার ছাদ, বিক্ষিপ্ত আসনগুলোতে রক্ত।