চট্টগ্রাম থেকে: পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে শ্রীলঙ্কা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির ফাইনালে সোমবার পাকিস্তানের যুবাদের দেয়া ১৩৪ রানের লক্ষ্য ২৩.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়েই টপকায় লঙ্কান যুবারা। ওপেনার সাদিরা সামারাবিক্রমার ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৪৫ রান।
শ্রীলঙ্কা ইনিংস বিরতিতে যায় ৭ ওভারে ১ উইকেটে ৩৩ রান নিয়ে। দলীয় পঞ্চাশ পার হওয়ার পর উইকেট পড়ে আরও একটা। সেমিফাইনালে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে অবিচ্ছিন্ন থেকে ১৬৫ রানের জুটি গড়া চারিথ আশালঙ্কা ও সামারাবিক্রমা এদিনের জুটি মাত্র ২.৪ ওভারের। অল্প সময়ের জুটিতেই ৫ বাউন্ডারিতে যোগ হয় ২৪ রান। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ৪ রানে সাজঘরে ফিরে যান আশালঙ্কা।
ম্যাচে ৭৬ রানে তিন উইকেট হারানোর পরও আক্রমণাত্মক মেজাজ ধরে রাখেন সামারাবিক্রমা। অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো পেরেরা ফিরে যান ৮ রানে। আর ৪২ বলে ৮ চারে ৪৫ রানে ফেরেন সামারাবিক্রমা। শেষদিকে ৯৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়লেও ওয়ানিদু হাসারাঙার ২২ ও কিথুরুয়ান ভিথানাগের অপরাজিত ২০ রানের ইনিংসে সহজেই লক্ষ্য টপকে যায় শ্রীলঙ্কা।
ফাইনালে নামার আগে দুই দলের অধিনায়কের কণ্ঠেই ছিল দাপুটে লড়াইয়ের প্রত্যয়। পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান আত্মবিশ্বাসী হয়েই বলেছিলেন শ্রীলঙ্কা দল সামর্থ্যের ১০০ ভাগ দিলে আমরা দেব ১১০ ভাগ। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই হয়তো কাল হয়েছে পাকদের! বৈরী আবহাওয়ায় টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল না সেটি স্কোর দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। লঙ্কান পেসার-স্পিনারদের সম্মিলিত দাপটে ৪২.১ ওভারে ১৩৩ রানে অলআউট হয় তারা।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের ফাইনাল দেখতে হাজির হয়েছেন শ’দুয়েক দর্শক। স্বাগতিক বাংলাদেশ নেই, দর্শকদের মাঝেও তাই উত্তাপ ছিল না স্বাভাবিকভাবেই। ইনিংসের ৩২তম ওভারে উসামা মির ব্যাক টু ব্যাক ছক্কা-চার হাঁকিয়ে দর্শকদের খানিক আনন্দ দিতে পেরেছেন। তখন গ্যালারি থেকে এল হালকা আওয়াজ। ওই ওভারে ১১ রান তুলে ১০০ রান পেরোয় পাকিস্তান। পরে আরও একটি ছক্কা হাঁকান মির। ২৬ রানের সর্বোচ্চ স্কোরারও তিনিই।
সমান ২৬ রান এসেছে অধিনায়ক রিজওয়ানের ব্যাটে। ২০ রান করেছেন খুশদিল শাহ। ৪২ রানে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা পাকদের হয়ে একটু প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন রিজওয়ান ও খুশদিল। ৩২ রানের বেশি এগোয়নি জুটিটি। রিজওয়ানকে বোল্ড করে সিহান জয়সুরিয়া ভাঙেন জুটি। পরের দুই ওভারে আরও দুই উইকেট নেন এই অফস্পিনার। ৮৫ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ১০০ রানের মধ্যে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে দলটি। অষ্টম উইকেটে ৪৭ রান যোগ হলে সে শঙ্কা কাটে পাকদের।
উসামা মিরকে বোল্ড করে ব্রেক থ্রু আনেন লেগস্পিনার ওয়ানু ডি সিলভা। শেষ উইকেটটি নেন এই বোলারই। এবারও বোল্ড। ২৫ রান করা হাম্মাদ আজমকে সাজঘরে পাঠান আমিলা অপয়শু।
সেমিফাইনালে আসিথা ফার্নান্দোর হ্যাটট্রিক লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশের টপঅর্ডার। পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি মুমিনুল-নাসিররা। ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষেও জ্বলে ওঠেন লঙ্কান পেসাররা।
লঙ্কানদের প্রথম সাফল্য এসেছে আসিথা ফার্নান্দোর হাত ধরেই। ব্যক্তিগত ৫ রানে আসিথার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ইমরান বাট। পরের দুটা নিলেন চামিকা করুনারত্নে। সাজঘরে ফিরলেন হোসেন তালাত (১০) ও হারিস সোহেল (৩)।
দলের তৃতীয় পেসার লাহিরু সামারাকুন প্রথম ওভারেই পেলেন সাফল্য। এবার ফিরলেন বিল্লাল আসিফ (১১)। টস জেতা পাকিস্তান তখন ৪২ রানে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে।
দুই-তিন দিন ধরেই চট্টগ্রামের আকাশ মেঘলা। সঙ্গে দমকা হাওয়া। বৃষ্টি যে হবে তা আবহাওয়ার পূর্বাভাসেই ছিল। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়েছে ম্যাচ শুরুর খানিক আগে। এজন্য ২টার ম্যাচ শুরু হয়েছে ৩০মিনিট দেরিতে। পরে দখিনা বাতাস আর মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া কাজে লাগিয়ে আসল কাজটা শুরুতেই সেরে ফেলেন লঙ্কান পেসাররা। বাকি কাজটা সারেন ব্যাটসম্যানরা। এতেই মিলল শিরোপার হাসি।