৩৭০ ধারা বাতিল করার প্রতিবাদে কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর ওপর টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছুড়েছে ভারতীয় বাহিনী।
স্থানীয় সংবাদের বরাতে আল-জাজিরা জানায়, শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। কয়েক হাজার জনতা ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কারফিউ উপেক্ষা করে শ্রীনগরের কেন্দ্রের দিকে যাত্রা করলে সেনারা বিক্ষোভে বাঁধা দেয়। এসময় উভয় পক্ষে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া হলে ভারতীয় সেনারা টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে।
বিক্ষোভে দেখা যায়, কিছু বিক্ষোভকারী কালো পতাকা এবং ‘আমরা স্বাধীনতা চাই’ ও ‘৩৭০ ধারা বাতিল মানি না’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, এই প্রতিবাদে ১০,০০০ লোক অংশ নেয়। শ্রীনগরের সৌরা এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয় এবং বিক্ষোভ করতে থাকে। ওসময় সেখানে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়া হয় বাতাসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এসময় কিছু বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানায়, এসময় কিছু মহিলা এবং শিশু পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উভয় দিক থেকে সেনারা বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় বলে জানান আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
মূলত ভারতের বিজেপি সরকার সোমবার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের নাগরিকদের সত্তর বছর ধরে পেয়ে আসা অধিকারগুলো রহিত করে। এতে ওই অঞ্চলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায় এবং নিজস্ব সংবিধানের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। ভারতের শাসিত কাশ্মীরকে সরাসারি নয়াদিল্লি থেকে শাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ভারত।
সোমবার এই ঘোষণার আগেই ভারত প্রায় ১০ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে কাশ্মীরে। জারি করে কারফিউ। টেলিযোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং গ্রেপ্তার করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের।
ভারতের ওপর বিশ্বাস নেই কাশ্মীরিদের
শুক্রবার দুপুরে আশপাশের মসজিদে মুসলমানদের জুমার নামাজের জন্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে ভারত সরকার। তবে শ্রীনগরের বড় জামে মসজিদ বন্ধ ছিলো।
এসময় এক পুলিশ সদস্য রয়টার্সকে বলেন, তিনি নিয়মিত যুবকদের পাথর নিক্ষেপের মুখোমুখি হয়েছেন।
স্থানীয় ৩২ বছর বয়স্ক তারিক আহমেদ জানায়, ‘যদি তারা নিরস্ত্র কাশ্মীরিদের ওপর শক্তি ব্যবহার করতে থাকে, তবে আমরাও বসে থাকবো না। ভারত সরকারের ওপর আমাদের কোনো বিশ্বাস নেই। তাদের উচিত আমাদের এই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। অন্যথায় একমাত্র বিকল্প সশস্ত্র সংগ্রাম’।
কাশ্মীরের ভয় হলো যে, বিজেপি সরকার কাশ্মীরিদের অন্যত্র স্থানান্তর করতে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে, যেন ভারতের অন্য অঞ্চলের লোকজন সেখানে জমি কিনতে ও ঘর করতে পারে। ৩৭০ ধারায় ভারতীয়দেরকে এই অঞ্চলের বাইরের বাসিন্দাদের বসতি স্থাপন ও সেখানে জমি কেনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
মোদী অবশ্য এই অঞ্চলটিতে ‘সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ’ মুক্ত করার জন্য এই ধারা বাতিলের কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ত্বরান্বিত হবে।
পাকিস্তান, চীনের প্রতিবাদ
কাশ্মীরের বিশেষ মযাদা বাতিল করায় প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতদের ফিরিয়ে নিয়েছে, বাণিজ্য স্থগিত করেছে, আন্তঃসীমান্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ও পাকিস্তানে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন নিষিদ্ধ হয়েছে।
শুক্রবার পাকিস্তানের কয়েক হাজাপর মানুষ করাচিতে বিক্ষোভ করেছে, সেখানে মোদিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে বিক্ষোভকারীরা এবং জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেছে। এছাড়াও পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ, লাহোর ও কোয়েটায়ও বিক্ষোভ হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেছি শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে উপস্থিত হয়েছেন।
কুরেশির সঙ্গে বৈঠকের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে যে, বেইজিং কাম্মীরে অশান্তি ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুবই উদ্বিগ্ন’।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীন তার বৈধ অধিকার রক্ষায় পাকিস্তানের পক্ষকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
চীন এছাড়াও কাশ্মীর ইস্যুটি জাতিসংঘের সমাধান করা উচিত মন্তব্য করেছে।
দেশটি আরও বলেছে, পাকিস্তান ও ভারত উভয়ই চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। দক্ষিণ এশিয়ার জাতীয় উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখতে আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহবান জানাচ্ছি।
চীনের সঙ্গে বৈঠকের পর পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রী কুরেশি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে বলেছেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, চীন আবারও প্রমাণ করেছে দেশটি পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য বন্ধু।
রোববার চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও।