প্রবাস জীবনে মানুষকে নানান ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সংস্কৃতিমনা মানুষরদেরও সেখানে একটু সংস্কৃতির সঙ্গে থাকতে গিয়ে যেতে হয় নানান অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। সেসব নিয়েই এবার ফেসবুকে পোষ্ট দিলেন এক সময়ের জনপ্রিয় সংবাদ পাঠিকা আসমা আহমেদ।
ফেসবুকে এক পোষ্টে তিনি লিখেছেন, প্রায় ১৫ বছর যাবত প্রবাসে আছি। এখানকার ব্রডওয়ে, সিনেমা, টিভি সবকিছুর পোকা আমি। সেইসাথে খেয়াল রাখি দেশীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের। এখানে অনেক গুণী প্রতিভা আছে। তারা নাটক মঞ্চায়ন করে, বিভিন্ন পার্বণে আয়োজন করে নান্দনিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। আমাকে কেউ আমন্ত্রণ জানালে যেতে চেষ্টা করি। কিছু অনুষ্ঠান দেখে তো মুগ্ধ হয়ে যাই। যেমন অন্য থিয়েটারের মঞ্চায়িত আহমেদ হোসেন নির্দেশিত একটি নাটক, ‘জয়িতা’। এক নারীর সংগ্রামী পোড়খাওয়া জীবনের টানাপড়েন আর তার একাকী পথচলা অসাধারণ নৈপুন্যের সাথে তুলে ধরা হয় নাটকটিতে, আমি দর্শক সারিতে বসে ভাবছিলাম অন্য কথা, নামমাত্র দর্শনীর বিনিময়ে এতো চমৎকার একটি নাটক? কারণ এখানে কোনো কিছু মঞ্চায়িত করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। আয়োজনে মেলা খরচ।
এই কদিন আগে দেখি সবাই অস্থির, টরেন্টোতে গায়ক শ্রীকান্তের আগমন, একটা গানের অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। আমি শ্রীকান্তের গান পছন্দ করি। একজন প্রথিতযশা শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও হেমন্ত/মানবেন্দ্র এদের প্রচুর গান গেয়ে থাকেন শ্রীকান্ত, ব্যাপারটা আমার নজরে পড়েছে- তাই এক শিল্পীর কণ্ঠে অনেক শিল্পীর গান শোনার লোভে টিকিট কাটলাম। কিন্তু অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে দেখি অনেক আগেই হল কানায় কানায় পূর্ণ এবং অনেকেই টিকেট করে গিয়েও বসতে না পেরে দাড়িয়ে আছে।
সবশেষে আসমা আহমেদ লিখেছেন, আমাদের দুজনকে এক ভলান্টিয়ার আসনের ব্যবস্থা করে দিলো। কিন্তু অনুষ্ঠান তো আর শুরু হওয়ার নাম নেই। আয়োজক নিজেই সঞ্চালক যা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। কারণ এমন একটি বড় আয়োজনে যিনি আয়োজক তার খেয়াল রাখতে হয় সবদিকে, মাথায় থাকে একশো টেনশন, তো তাকেই সঞ্চালনা করতে হচ্ছে কেন? ফলে এক লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হলো। এদিকে ধারণ ক্ষমতার বেশি টিকেট বিক্রির ফলে দর্শকের ভোগান্তি- আমি একটু মুডি দর্শক। আস্তে আস্তে ধৈর্য কমতে থাকলো। এরই মাঝে দেখি আমার এক স্নেহভাজন এক্সিট এরিয়ায় চেয়ার লাগিয়ে বসার চেষ্টা করে নিরাপত্তাকর্মীর গালমন্দ খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। আর পারলাম না, ওদের দুজনকে আমাদের চেয়ারটি ছেড়ে অনুষ্ঠান স্থল থেকে বেরিয়ে এসে ভগ্ন মনোরথে গিয়ে ঢুকলাম আমার এক প্রিয় রেস্টুরেন্ট ‘রেড লবস্টার’ এ। মজার সি ফুড খেয়ে ভুলতে চাইলাম শ্রীকান্তের গান শুনতে না পারার কষ্ট। তো প্রথমে যে অনুষ্ঠানের কথা টা বলেছিলাম, এর বিপরীতও আছে। কোনো কোনো আয়োজক এমন ই-ওয়ান টাইম অনুষ্ঠান কেল্লা ফতে। দর্শককে ডেকে এনে, এইভাবেই তাদের ভোগান্তি দেয়া ছাড়া আর কিছুই তাদের করার নেই মনে হয়।