চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শোকের পতাকায় সহকর্মীদের স্মৃতিতে ফয়সাল

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) বাগানবিলাস ঝাড়ের পাশে উড়ছে কালো পতাকা, পাশেই জাতীয় পতাকা, অর্ধনমিত। রঙিন ফুলের ঝাড়টির ঠিক বিপরীতে দু’টি কালো ব্যানার, আরেকটি টাঙানো ডিআরইউ ভবনের দেয়ালে। সেসব ব্যানারের সাদাকালো ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল আহমেদ ফয়সালের ছবি।

বছরের সব দিন সাংবাদিকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতির জায়গাটিতে আজ ছিল শূন্য, বিষণ্ণতায় ভরা। কারণ হাস্যোজ্জ্বল এই পরিচিত মুখটি আর দেখতে পাবেন না সহকর্মীরা।

নেপালে ইউএস বাংলা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে ডিআরইউতে এক মিনিটের নিরবতা পালনের পর প্রেসক্লাব পর্যন্ত শোক র‌্যালি করেন ঢাকার সংবাদকর্মীরা।

এরই ফাঁকে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক আহমেদ ফয়সালের স্মৃতিচারণ করেন একই টেলিভিশন চ্যানেলে তার সহকর্মী লাবণী গুহ।

সহকর্মী ফয়সাল ও নেপালে হতাহতদের স্মরণে ডিআরইউ এর কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি তাকে স্মরণ করতে কালো পোশাকে এসেছিলেন লাবণী।

কর্মস্থলে ফয়সালের জ্যেষ্ঠ হলেও লাবণী গুহর কাছে ফয়সাল ছিলেন পরিবারের বড় বোনের কাছে ছোট ভাইটির মতো।

সদ্য স্মৃতি হয়ে যাওয়া ফয়সালের প্রসঙ্গে তিনি বলেন: বৈশাখী টেলিভিশনে আমরা সবাই একটি পরিবারের মতো। আসলে ও ছিল আমার ভাই। হাসি-ঠাট্টায় নিউজরুম মাতিয়ে রাখতো সে। আমি ওকে ঠাট্টা করে ‘পুইসাল’ বলতাম। জবাবে পেতাম ওর পরিচিত হাসি। আমার মেয়েটা অফিসে আসলে ফয়সাল ওর সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলতো। তাই যখন ফয়সাল মারা গেছে এই সংবাদ প্রচারিত হয় তখন আমার মেয়েটাও বিশ্বাস করতে পারছিল না। আমাকে সে জিজ্ঞেস করছিল মা, ফয়সাল মামা! ফয়সাল মামা নাই!

১২ মার্চ বিধ্বস্ত বিএস-২১১ উড়োজাহাজে ফয়সাল ছিল এটা জানার পর বৈশাখী টেলিভিশনের বার্তাকক্ষের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন: আমি তখন অফিসের বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করছিলাম, সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার একজন পরিচিত জানান ওই উড়োজাহাজে আমাদের ফয়সাল ছিল কিনা সেটা খোঁজ নিতে।

‘নিহতের নামের তালিকা আসছিল, সেখানে আহমেদ ফয়সাল দেখে আমরা সহকর্মীরা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছিলাম এই ফয়সাল কি আমাদের ফয়সাল? কারণ ফয়সাল যে নেপাল যাচ্ছে এটা অফিস এবং ওর পরিবারও জানতো না।  ৫ দিনের ছুটি নিয়ে ফয়সাল নেপাল যাচ্ছিল এবং ওই উড়োজাহাজে ছিল এটা আমরা বুঝলাম যখন অফিসে ওর ড্রয়ারে থাকা পাসপোর্টের নম্বর এবং নিহতদের পাসপোর্টের তালিকায় থাকা একটি নম্বর মিলে গেলো।  এরপরও আমরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যখন আমরা নিশ্চিত হই যে ফয়সাল নেই তখন নিউজরুমে কান্না আটকে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি।’

লাবণী গুহ’র এই স্মৃতিচারণের পর প্রেসক্লাবের সামনে শোক র‌্যালি করে ফিরে এসে ডিআরইউ আয়োজিত স্মরণসভায় ফয়সালের সঙ্গে বড় ভাই, ছোট ভাই সুলভ সম্পর্ক এবং তার কাজের প্রতি আন্তরিকতার কথা স্মরণ করেন সহকর্মীরা।
এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ডিআরইউ এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।