‘অনেক দিন দেখার সাধ ছিলো। আজ এসে সেই স্মৃতি দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে। জানি না এ স্মৃতি দেখে শেখ হাসিনার মনের অবস্থা কি হয়!’ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দেখতে এসে মন্তব্য খাতায় কথাগুলো লিখেছেন হাটহাজারীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী শাহজাহান বেগম।
শুধু মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীই শুধু নন, জাতির জনকের জন্য সবসময়ই ক্রন্দনসিক্ত বাংলাদেশ। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ঝড়-ঝাপটাতো গেছে আক্রান্ত পরিবারের বেঁচে যাওয়া সন্তানদের উপর দিয়েই।
বঙ্গবন্ধুকে হারানোর কষ্টে কেঁদেছে জাতি, এখনো কাঁদে বাঙালী। বৃদ্ধ থেকে শিশু সবাই আজও কষ্ট পায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক দিনটিকে স্মরণ করে।
সেই কান্না প্রকাশ পেয়েছে ছয় বছর বয়সী অনামিকা চৌধুরীর মন্তব্যে। ‘আমার কান্না আসছে।’ কাঁচা হাতে লেখা এই একটি বাক্যই প্রকাশ করে তীব্র অনুভূতি।
নয় বছর বয়সী রিমঝিম অবশ্য মনের কথা প্রকাশের সঙ্গে একটি চাওয়াও জানিয়ে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রাখা মন্তব্য খাতায়, ‘খুনিদেরকে আমি ও আমার পরিবারের সবাই ঘৃণা করি। বাংলাদেশে যেনো এমন ঘটনা আর না হয়।’
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বপ্রদানকারী শক্তি ও সাংগঠনিক ক্ষমতার অভাবও বোধ করেন অনেকে। জাতির জনকের বাড়ির প্রতিটি পরতে ছড়িয়ে থাকা স্মৃতি যেনো বার বার সবাইকে মনে করিয়ে দেয় তার অভাব।
পঞ্চগড় থেকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দেখতে এসেছিলেন অরুণ রায়। স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে মন্তব্য খাতায় তিনি লিখেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য দেখে আমার খুবই খারাপ লাগলো। আমার শুধু এটুকুই বলার যে তার মতো আরেকজন বাংলাদেশের বুদ্ধিমান নাগরিক বা নেতা প্রয়োজন।’
আবার দৃঢ়তাও প্রকাশ পায় জামিল নামে একজন কষ্ট আর ক্ষোভের সঙ্গে তার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন: আমার দেখা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি। যে আমাদের নেতাকে মেরেছে তাদের ঠাঁই যেনো বাংলাদেশে না হয়।’
বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করার প্রত্যয় আর দাবিও এই মানুষটির। তিনি শুধু একা নন, শোকবইয়ের পাতায় পাতায় কালো কালো অক্ষরে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আহবান।
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। ক্যালেন্ডারের হিসাবে তারিখটা অনেক আগের। কিন্তু এখনো অনেকে মেনে নিতে পারেন না যে বঙ্গবন্ধু নেই। রনি রহমান তাই লিখেছেন, ‘আজ আমার এখানে আসার কথা ছিলো না। কিন্তু কিভাবে যেন এখানে এসে পড়লাম। এসে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো। কারণ ছোটবেলা থেকে শুধু বইতে পড়েছি যে, বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু এখানে এসে আমরা উপলদ্ধি করতে পারলাম। কিভাবে যে আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে। তুমি আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাওনি। তুমি আছো প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে। তোমার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।’
চার দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। জনকের আদর্শকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন তাদের। জয়পুরহাট থেকে আসা মাহমুদুল হাসান মাহমুদ লিখেছেন, ‘তোমাকে সামনে রেখে আমার প্রতিটি পথচলা যেন শুরু হয়। দোয়া করো।’
একই রকম কথা লিখেছেন মোমিন ও হাফিজ। ‘মুজিব তোমাকে দেখিনি, কিন্তু তোমার স্মৃতিজড়িত বাড়িতেই তোমাকে খোঁজার চেষ্টা করে গেলাম।’
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে এসে আজও মানুষ খোঁজে বঙ্গবন্ধুকে। তার একটুখানি নেতৃত্বই হয়তো বদলে দিতে পারতো পুরো দেশকে। সেজন্যই জাতির পিতার আদর্শে পথ চলার স্বপ্ন আঁকে বাংলাদেশ।
(আগামীকাল শেষ পর্ব)