দেশের শেয়ারবাজারে আবারও নেতিবাচক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার ৭ মার্চ পুঁজিবাজারে আবারও বড় ধস নেমেছে। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ সোমবার পৌনে ৩ শতাংশ বা ১৮২ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে। আর অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ৪৫৫ পয়েন্ট।
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে। আর আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ভালো–মন্দ নির্বিশেষে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেয়াতে বাজারে বড় ধরনের দরপতন। অনেকে এই দরপতনের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকেও দায়ী করছে।
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এক দিনে সূচকের এতোবড় পতন হয়নি। ডিএসইএক্স সূচক সাড়ে ছয় হাজারের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নেমে যাওয়ায় আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে অনেকে নিজের পোর্টফোলিও খালি করে ফেলেছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ। আইসিবিসহ প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ক্রেতা ও সহায়করা মার্কেটে না থাকাকেও অনেকে বড় পতনের জন্য দায়ি করছে।
শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকটি আবারও সাত মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই এ সূচক ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে সূচকের এ পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। সঙ্গে লেনদেনও আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। শুধু ঢাকা নয়, টোকিও থেকে শুরু করে চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারতের মুম্বাইয়ের সব শেয়ারবাজারেও আজ সোমবার বড় দরপতন চলছে। বিশ্ববাজারে দাম কমার বিভিন্ন কারণের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একটি বড় কারণ হলেও বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে এর প্রভাব পড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ বিশেষজ্ঞরা খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ, ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি আমদানি-রপ্তানি দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ১ শতাংশেরও কম। এ কারণে দেশের অর্থনীতি বড় সংকটে পড়ার কথা নয়। তাছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৪৮টি কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ ১০-১৫টি কোম্পানির এ দুই দেশের সঙ্গে সরাসরি আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। তবে এটি ঠিক, যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব না হলেও পরোক্ষ প্রভাব কিছুটা রয়েছে।
এ যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কমোডিটি পণ্যের দর বেড়েছে। বিশেষ করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলার ছুঁয়েছে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ। মহামারির শুরুতে সমুদ্রগামী জাহাজে করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি খরচ ২-১০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছিল। এখন তা আরও বাড়ছে। এর বাইরে ভোজ্যতেলসহ অন্য সব প্রয়োজনীয় কমোডিটি পণ্যের দরও ঊর্ধ্বমুখী। এতে মূল্যস্ফিতি বাড়ছে সর্বত্র। এসবের পরোক্ষ প্রভাব শেয়ারবাজারে থাকতে পারে বলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এই অবস্থায় শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ অর্থমন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে এছাড়া আইসিবিসহ প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ক্রেতারাও যেনো মার্কেটে উপস্থিত থাকে সেদিকেও নজর দেয়া দরকার।