মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ বিতর্কেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই কাদা ছোঁড়াছুঁড়িই অব্যাহত রেখেছেন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘রাশিয়ার পুতুল’ বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে পুতিন সিরিয়া ইস্যুতে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারিকে ঘোল খাইয়েছেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প।
তবে ফক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেসের সঞ্চালনায় এবারের বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যু উঠে আসে।
শেষ দিনের বিতর্ক জমজমাট হলেও অন্যবারের তুলনায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তত প্রথম অংশে নিজেকে সামলে রাখার বেশ চেষ্টা করেছেন বলে মনে করেন বিতর্ক বিশ্লেষকরা। নীতি নির্ধারণ, গর্ভপাত ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান বেশ সুশীলভাবেই তুলে ধরেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।
কিন্তু ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন রাশিয়া ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক এবং উইকিলিকসে তথ্য ফাঁসের প্রসঙ্গ তুলতেই আগের রূপে ফিরে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেন, ‘তিনি নন, হিলারি নিজেই পুতিনের হাতের পুতুল।’
যৌন হয়রানির অভিযোগের ব্যাপারে ট্রাম্প বলেন, ‘যে নারীরা তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছেন তাদের উদ্দেশ্য শুধুই বিখ্যাত হওয়া আর তারা হিলারির প্রচারণার অংশ ছাড়া কিছু না।’
প্রেসিডেন্ট হলে স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাখাত রক্ষায় কর বৃদ্ধি ও সুবিধা হ্রাসের পরিকল্পনা রয়েছে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে হিলারি জানান, সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে আরও অর্থ যোগ করতে ধনীদের ওপর কর বাড়ানো প্রয়োজন। ওই সময় তার কথার মাঝেই বাধা দেন ট্রাম্প; বলেন, “কতটা জঘন্য একজন মহিলা!”
দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে হিলারি বলেন, “আমি আমেরিকার শিশু এবং পরিবারের উন্নয়নকে আমার জীবনের মূল কাজ হিসেবে নিয়েছি। প্রেসিডেন্ট হলে এটাই আমার মিশন থাকবে।”
এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের ভেতরের দিকের শহরগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। আমি আফ্রিকান-আমেরিকানদের জন্য যা করব, হিলারি দশ জন্মেও ততটা করতে পারবেন না।”
এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন কিনা, সে ব্যাপারেও কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
লাস ভেগাসের নেভাডা ইউনিভার্সিটিতে নব্বই মিনিটের বিতর্কে আরও উঠে আসে সন্ত্রাসবাদ, অভিবাসী ও সীমান্ত সমস্যা, রাশিয়ার সাইবার হামলা, নারী অধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যু। এবারও বাদ পড়েনি সিরিয়া-ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নারীর উন্নয়নে আরও অনেক পদক্ষেপ নেয়া এবং সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন হিলারি ক্লিনটন। আর অস্ত্র রাখার অধিকার সংরক্ষণের ওপর জোর দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সীমান্ত নিরাপত্তা কমার অভিযোগ এনে ওবামা প্রশাসনকে দুষলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাল্টা জবাবে ১ কোটি ২০ লাখ অভিবাসীর নিরাপত্তা রক্ষার কথা বলেন হিলারি।
দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে শুরুতে হাত না মেলালেও শেষে সৌজন্য দেখিয়ে হাত মিলিয়েছিলেন হিলারি-ট্রাম্প। কিন্তু তৃতীয় ও শেষ বিতর্কে জনসমক্ষে সেই ভদ্রতাটুকুও দেখানোর প্রয়োজন মনে করেননি দু’জনের একজনও।
আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি।