চাকুরিতে পুনর্বহাল এবং স্থায়ী করার দাবিতে মার্কিন কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ লিমিটেডের গুলশান কার্যালয়ের সামনে শেভরন থেকে ছাটাই হওয়া শ্রমিক-কর্মচারিরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, এই রোজার মধ্যে ৩ মাসের ওভারটাইম ও ২ মাসের বেতন বন্ধ করে রেখেছে শেভরন।
তবে শেভরন কর্তৃপক্ষ বলছে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের আর চাকুরিতে বহাল রাখা সম্ভব নয়।
চাকুরি ফিরে পাবার দাবিতে সকালে গুলশানে শেভরন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া কর্মচারিরা বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে অক্সিডেন্টাল থেকে ইউনিকল এবং পরে শেভরনের প্রথম পর্যায় থেকে তারা চাকুরি করছেন। এদের মধ্যে থেকে কিছু শ্রমিককে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হলেও ২০০৮ সালে আউটসোর্সিং এর নামে কিছু শ্রমিকের চাকুরি চুক্তিভিত্তিক করে দেওয়া হয়।
শ্রমিকদের দাবি, এ কারণে শেভরনের হয়ে কাজে যোগ দিলেও তাদের বেতন দিতেন কনট্রাকটররা। সম্প্রতি চুক্তি শেষ হলে এসব কর্মচারিকে আর কাজের সুযোগ দিচ্ছে না শেভরন।
ছাটাই শ্রমিক-কর্মচারিরা বলেন, তাদের অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। এরকম অবস্থায় তাদের পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে, যা অনৈতিক।
শ্রমিকরা জানান, অন্যায়ভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও মানববন্ধনে অংশ নেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বামীর চাকরি না থাকলে কীভাবে তাদের পরিবার চলবে তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানান।
অবিলম্বে শেভরনে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা ঈদে বেতন-বোনাসের নিশ্চয়তাও দাবি করেন।।
তবে শেভরন কর্তৃপক্ষ বলছে, কন্ট্রাকটরদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়াতে তাদেরকে কাজে বহাল আর রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
এই বিষয়ে শেভরনের কমিউনিকেশন এক্সটার্নাল এফেয়ার্সের ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, প্রজেক্ট ও চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় সঙ্গত কারণেই আমাদের লোকবল কমাতে হয়েছে। ‘ছাটাই হওয়া কর্মচারিরা আমাদের সরাসরি কর্মচারি নন। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতে ওইসব শ্রমিককে নিয়োগ করা হয়েছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান শেভরন ১৮৭৯ সালে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে বিশ্বের ১৮০ দেশে কর্মরত আছে। শেভরন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশী বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারীও তারা। উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) অনুযায়ী এ মুহূের্তে দেশের মোট গ্যাস চাহিদার প্রায় ৫০ ভাগই সরবরাহ করে শেভরন বাংলাদেশ। বাংলাদেশে পেট্রোবাংলার সঙ্গে অংশীদারিত্বে বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী-অস্থায়ী প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশী কর্মরত আছেন।
তবে মার্কিন কোম্পানিটি ঘিরে বিতর্কও কম নয়। তাদেরকে জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র দেওয়া নিয়ে যেমন অভিযোগ আছে তেমনি মাগুরছড়া বিস্ফোরণের জন্য ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার অভিযোগও আছে। শেভরনের পূর্বসূরী অক্সিডেন্টাল কাজ করার সময় মাগুরছড়ায় বিস্ফোরণ ঘটে যে কারণে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবি করে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি।
বন বিভাগের হিসাবমতে, ওই দুর্ঘটনায় প্রত্যক্ষ ক্ষতি ৩২.৫৩ কোটি টাকা, অন্যান্য ক্ষতি মিলিয়ে যা মোট ১৭৬.৯৭ কোটি। পরিবেশ মন্ত্রণালয় পুরো হিসাব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬০৯ কোটি টাকা দাবি করে অক্সিডেন্টালের কাছে ক্ষতিপূরণও চেয়েছিলো।
গত ১৪ জুন মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ১৮ বছর পার হয়েছে। দুর্ঘটনার পর খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি গঠন ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই যে রিপোর্ট দেয় তাতে অগ্নিকাণ্ডের জন্য অক্সিডেন্টাল (এখন শেভরন)-এর দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করা হয়।