দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অনেকটা এগিয়েছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে দেশ থেকে পুরোপুরিভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দেশের বেকারত্ব কমাতে হবে। আর সেজন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান আর বিনিয়োগের ওপরে সরকারকে বেশি করে জোর দিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের হিসেব মতে, দেশের বর্তমান দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ১০ বছরে জাতীয় আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
২০১৬-২০ সালের মধ্য দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, দারিদ্র্য কমানো এবং সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ চরম দারিদ্র্য দূর করার আশা করছেন বর্তমান সরকার। দেশটির মানুষ যদি সৃজনশীলতা, নিজেদের লক্ষ্য যদি স্থির রাখা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ শূন্য দারিদ্র্যের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন, দেশে হতদরিদ্র জনসংখ্যা কমিয়ে আনা এসব বিষয়কে দারিদ্র্য দূরীকরণ করার পজেটিভ দিক হিসেবে দেখছেন সিপিডি-এর নতুন নির্বাহী পরিচালক পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ। দেশ থেকে দারিদ্র দূরীকরণে কর্মসংস্থান বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।
ড. ফাহমিদা খাতুন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা দারিদ্র্য দূরীকরণে এগিয়েছি। তবে যেভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করছি সেভাবে হবে না, এটি পুরোপুরি দূর করতে হলে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আয় বর্ধনকারী কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। যে আয় দিয়ে তার মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারে। কারণ আমাদের দেশে অনেক কর্মসংস্থান আছে, যেখানে আয়ের কোনো কাঠামো নেই।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগের জোর দিয়ে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাড়লে বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। কর্মসংস্থান হলো কিন্তু প্রশিক্ষিত জনগণ নেই তাহলেও হবে না। প্রথমে আমাদের জনগণকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। অবকোঠামোগত ঘাটতি বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাস্তা-ঘাট, পোর্ট-বন্দর এসবগুলোকে সরকারি উদ্যোগে উন্নত করতে হবে। যাতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ব্যাঘাত না ঘটে এবং সর্বোপরি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অাকর্ষণ হয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহী হবে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারে শিক্ষা, সাস্থ্য ও কর্মসংস্থান এই তিনটি দিকে বেশি নজর দিতে হবে। বাংলােদেশে এখন যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি সেটি হলো দরিদ্র জনগণের মধ্যে বেকারত্ব। এবং যতই আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করি না কেন বেশির সুবিধা চলে যাচ্ছে দেশের উপর মহলে। যার কারণে আয় বন্টনের বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ বৈষম্য হ্রাস করা।
প্রান্তিকভাবে যারা পড়াশোনায় কম তারা কর্মসংস্থান করতে পারছে না। সেকারণে দরিদ্র শিশুদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেওয়ার কথা বলেছেন আবু মোহাম্মদ। শিক্ষার মাধ্যমে যদি তারা না এগোতে পারে তাহলে দেশে হতদরিদ্র্যের হার বেড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২৪.৩ শতাংশ ও চরম দরিদ্র ১২.৮ শতাংশ। শুধু শিক্ষা নয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টেকনিক্যাল দিকগুলো তাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাদের সক্ষমতা বাড়লে সরকারের প্রচেষ্টাগুলো কাজে লাগবে। এছাড়া দেশের দুর্নীতি কমে আসলে দেশের দারিদ্র্য দূর করতে সহজ হবে।
দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের অর্জনকে ‘চমৎকার’ বলেছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনি বলেছেন, মাত্র এক বছরের মধ্যে পৃথিবীতে ১০ কোটি মানুষকে অতিদারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে ‘চমত্কার’ হিসেবে বর্ণনা করে কিম বলেন, এই অভিজ্ঞতা অন্য দেশের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা, আমাদের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিদ্যমান অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ করতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। সেই লক্ষ্যে ২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ জাতির পিতার ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও বঞ্চনামুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের লালিত স্বপ্ন।