‘পলাশীর যুদ্ধ : সত্যের অনুসন্ধানে’-এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছে প্রথম অনলাইন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলন (আইসিএইচসি)।
পলাশী দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সংগঠন মুক্ত আসরের উদ্যোগে চারদিনব্যাপী এই সম্মেলন আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।
গতকাল ২০ জুন সন্ধ্যা ৬টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বিশিষ্ট অভিনেতা ড. ইনামুল হক, বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক এমরান জাহান, ড. আবেদা সুলতানা, নুরুন আখতার, আহমেদ হেলাল, বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা জাকির হোসেন ও মহাসচিব শাহিদা খান ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবেদা সুলতানা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শব্দসৈনিক কামাল লোহানীকে স্মরণ করে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেন। এরসঙ্গে তিনি করোনায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, পলাশী যুদ্ধের আট ঘণ্টা স্থায়ী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। এই আয়োজনে মাধ্যমে পলাশীর যুদ্ধের রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনীতি , জীবন দর্শনের কথা জানতে পারব। যে জাতি পূর্বপুরুষদের কাছে থেকে শিক্ষা নেয় না, তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।’
নুরুন আখতার বলেন, আর্ন্তজাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতির সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ইতিহাস হয়ে থাকবেন।
জাতীয় মানসিক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এমন সময়ে এই আয়োজনটি করছি, যখন বিশ্বময় করোনায় সংকট মুর্হুত। এই ধরণের আয়োজন মানসিক অবস্থা উন্নতিতে কাজ দেবে। তাছাড়া আমাদের সবাইকে ইতিহাসের দিকে যেতে হবে। মানসিক উন্নয়নের জন্য ইতিহাস চর্চা করতে হবে। ইতিহাসকে বাদ দিয়ে কখনো স্বপ্ন দেখা যায় না।
ইনামুল হক বলেন, যখন আমরা ঘরে বন্দী তখন এমন আয়োজনের ফলে বেশ ভালো লাগছে। এতে করে আমার মতো বয়স্ক মানুষদের যেমন ঋদ্ধি করবে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও। কারণ ইতিহাসকে জানতে হবে।
চারদিনের এই সম্মেলনে ৪টি দেশ থেকে ১০জন খ্যাতিমান গবেষক, শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে পলাশী যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ নয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং রাত সাড়ে ৮টায় পলাশী যুদ্ধের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া।
আজ তিনটি সেমিনার রয়েছে। সন্ধ্যা সাতটায় যুক্তরাজ্যের লেখক ও্ গবেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার, ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমিত আল রশিদ এবং ইরানের ইয়াযদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কাযেম কাহদূয়ি।
আগামীকাল থাকবেন ভারতের অধ্যাপক মো. খাইরুল আনাম ও লেখক ও শিল্পী শ্রীসলিল কুমার দাস। শেষ দিন থাককেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক অশীষ কুমার দাস এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এমরান জাহান।
আয়োজন সম্পর্কে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, দেশের করোনাকালে ভয়াবহ পরিস্থিতে আমরা মানসিকভাবে ভালো নেই। কিন্তু এটাই সত্য আমাদের উত্তরণের জন্য নানা রকমের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। করোনার জন্য প্রথমবারের মতো অনলাইনে পলাশী দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজন করছি। নিশ্চয়ই এমন আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে কাছে নিয়ে যেতে পারব।
আয়োজনটি বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।(https://www.facebook.com/BdHOlympiad/)
আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলনে সহযোগিতায় আছে স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ ও বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা।