এ প্রজন্মের তরুণ গায়ক শেখ সাদী কখনই জানতেন না গায়ক হবেন! গানে ছিল না তার হাতেখড়ি। তবে নিজের মনে গুনগুন করে গাইতেন! গান না গাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও গান লিখতে ভালোবাসতেন। এরকম হাসতে খেলতেই লিখে ফেলেন ‘ললনা’ গান। ২০১৮ সালের নভেম্বরের প্রথম এ গানটি প্রকাশের পরেই বদলে যায় সাদীর জীবন। অনলাইনে শোরগোল ফেলে দেয় ‘ললনা’। এরপর এই তরুণ সাদীকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে ১১ টি গান প্রকাশ করেন তিনি। নতুনদের মধ্যে ফ্যান-ফলোয়ার্সে এগিয়ে থাকা সাদী এখন নিয়মিত গান করছেন।চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে জানালেন তার শুরুর গল্প, সংগীত পথচলা ও ভবিষ্যৎ ভাবনা
সংগীতে শুরুর গল্পটা কেমন ছিলো?
গান গাওয়ার চেয়ে লিখতে পছন্দ করতাম। নিজের জন্য লিখতাম। কখনই অন্যের জন্য লেখার চিন্তা ছিল না। ‘ললনা’ আমার প্রথম গান। তখন আইইউবি-তে বিবিএ নবম সেমিস্টারে পড়ি। একদমই ফান করে ‘ললনা’ গান লেখা। বন্ধুরা বলল, গানটি ‘তুই গাইতে পারিস’। এরপর সুর করে গাই। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করি। ওইসময় মোটেও সিরিয়াসভাবে নেইনি। পুরোটাই ছিল শখে। নিজের চ্যানেলে আপলোডের পরেই অডিয়ান্স গানটি পছন্দ করে। তখন মনে হয়, মানুষ যেহেতু পছন্দ করেছে আমার গান করা উচিত। এভাবেই গানে আসা। ব্যাপারটা হুট করেই আসা বলা যায়।
‘ললনা’ গানের কথায় ব্যক্তিগত কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন?
একদমই না। গানের কথায় কোনোভাবেই আমার কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা জড়িত না। আশপাশে রিলেশনশিপে যেগুলো দেখেছি এ ধরনের ব্যাপার খুব কমন। চারপাশের এসব দেখেই গানের কথা সাজিয়েছিলাম।
এ গানটা প্রকাশের পর সাড়া কেমন পেয়েছিলেন? সেই সময়ে অনুভূতি কেমন ছিলো?
গান রিলিজের তিনদিন পর ফেসবুকের বড় বড় গ্রুপ পেজে দেখলাম ‘ললনা’ শেয়ার হচ্ছে। পজিটিভ, নেগেটিভ প্রচুর মন্তব্য আসতে থাকে। শুরুর দিকে নেগেটিভ মন্তব্যগুলোই চোখে বেশি পড়তো। অনেকের গানের কথাগুলো ফান হিসেবে নিতে পারেনি। নেগেটিভ মন্তব্যের জন্য আমি অভ্যস্ত ছিলাম না। তবে দুই মিলিয়ে একটা মিক্সড ফিলিংস ছিল। কনফিউশড হয়ে যাচ্ছিলাম। একবার তো ভেবেই নিয়েছিলাম, এতো নেগেটিভ মন্তব্য আসছে, ঠিক আছে আর গানই করবো না। মনে হচ্ছিল, হায় হায় গান করে তো ভুল করেছি! কেন এই গান করলাম! তবে এর মধ্যে কিছু পজিটিভ মন্তব্য আমাকে ছুঁয়ে যায়। রাস্তায় বের হলে অনেকেই বলতো, বাসায় বাচ্চারা আমার ‘ললনা’ ছেড়ে দেয়ার পর খেতে রাজি হতো। কারণ গানের কথা টেডিবিয়ার, বার্বিডল, গরু খায় ঘাস শব্দগুলো ছিল। এ ধরনের মন্তব্যগুলো আমার মোটিভেট করেছে। তবে ‘ললনা’র পর যে গানগুলো করেছি সেসব গানে আর নেগেটিভ মন্তব্য পাইনা। সবসময় গান নিয়ে ভাবতে ভাবতে গানের প্রেমে পড়েছি। যার জন্য আমি আমার কাজটা উপভোগ করছি। গানের ভিউস যাই হোক, যে কজন দেখছে তাদের রেসপন্সটা উপভোগ করছি।
মাহফিলের মঞ্চে একজন বক্তা ‘ললনা’ গানের কথা কোট করে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এটা দেখেছেন নিশ্চয়ই! কীভাবে ফেইস করলেন?
আমি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান। কটূক্তি কিংবা এরকম বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ নিতে আগে থেকে অভ্যস্ত ছিলাম না। আমার পরিবারের কেউ মিডিয়া বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের নয়। আমার কোনো পরিকল্পনাও ছিল না মিডিয়ার যুক্ত হবো। কেউ যদি মিডিয়ায় থাকতো, হয়তো আগে থেকে এসব ব্যক্তি আক্রমণ গ্রহণে অভ্যস্ত থাকতাম। মাহফিলে ওই বক্তার ‘ললনা’ গান নিয়ে কথা বলার পর ব্যাপারটা আমি ব্যক্তিগতভাবে নেই। খুব খারাপ লেগেছিল। শতশত মানুষের সামনে আমাকে ধমক দিয়ে জাজ করা হয়েছিল। এটা দেখে তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। পরে চিন্তা করেছি, যিনি এভাবে কটূক্তি করেছেন তিনি সঠিক মানুষ না, আরো অনেককে নিয়ে এমন উগ্র মন্তব্য করা উনার অভ্যেস। তাই পরে আর আমি এসবে পাত্তাই দেইনি।
এখনও পর্যন্ত ইউটিউবে ৮৬ মিলিয়নের বেশি (৮ কোটি ৬০ লাখ) দর্শক ‘ললনা’ গানটি দেখেছে। আপনার নতুন গানগুলো ‘ললনা’র মতো হিট করছে না কেন?
এখন যে কাজগুলো করছি সেগুলো বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য না। আমার যেটা ভালো লাগে সে ধরনের গান করছি। নিজের চাওয়াটা প্রাধান্য দিচ্ছি। বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে না পৌঁছুলেও যাদের কাছে যাচ্ছে সেখান থেকে ৯০ শতাংশই পজিটিভ মন্তব্য আসছে। এখন অনেক গান হচ্ছে যা অসুস্থ বিনোদনের মতো। ইয়াং জেনারেশন ভালো মন্দ সহজে ধরতে পারছে না। আরেকটা কারণ হচ্ছে, যারা গুণী শিল্পী তারা নিয়মিত গান করছের না। দর্শক ভালো গান পাচ্ছে না হয়তো বা এ জন্য কুরুচিপূর্ণ কাজগুলো মানুষ সামনে পেয়ে ছড়াচ্ছে।
মিউজিক নিয়ে এখন কী ভাবছেন? ভবিষ্যতে গানেই স্থায়ী হতে চান?
শুরুতে শখে করলেও গানই এখন আমার ভালোবাসা। ভবিষ্যতে গান নিয়েই থাকবো। মানুষের যতটুকুই ভালোবাসা প্রশংসা পেয়েছি শুধুমাত্র এ গানের জন্য। আমার একটা চাওয়া আছে। আমাদের কাছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা কোয়ালিটি সম্পন্ন মানুষে ভরে থাকুক। গুণী শিল্পীরা আগের মতো নিয়মিত গান করুক। দেশের বাইরে যেন গর্ব নিয়ে বলতে পারি বাংলাদেশের শিল্পী। এছাড়া একেবারে নতুন বলতে আমিসহ মাহতিম সাকিব, জিসান খান শুভ আমরা সবাই যেন ভালো কোয়ালিটিফুল কাজ করি। আমার নিজের টার্গেট, আগামিতে আরও ভালো ভালো গান উপহার দেব। ভিউ হোক বা না হোক আমি আমার দিক থেকে চেষ্টা করে যাবো।
শুনেছি আপনি সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছেন?
বেশ কয়েকটি সিনেমাতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু আমি চাই, যখন অভিনয়ে যাবো শিখেই যাবো। গানের শুরুর সময়টায় আমি কিছু ভুল করেছি। কারণ তখন সেভাবে কিছুই বুঝতাম না। মিডিয়ার নতুন পরিবেশ বুঝতে বুঝতে হয়তো নিজের অজান্তে ভুল করেছি কিছু। কিন্তু আমি চাইনা, অভিনয়ের শুরুতেও কোনো ভুল হোক। বুঝেশুনে অভিনয়টা শিখে তারপর সিনেমাতে আসতে চাই। এতোটুকু গ্যারান্টি দিচ্ছি, সিনেমার নায়ক হলে যোগ্যতা অর্জন করেই হবো।