শুরুটা আগে হলেও কাতারের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা কাতার নিউজ এজেন্সি (কিউএনএ) সম্প্রতি হ্যাকিং এর শিকার হওয়ার ঘটনার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায়ই পরিস্থিতি জটিল হতে হতে এবার সম্পর্কচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
মঙ্গলবার হওয়া ওই হ্যাকিংয়ে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির উক্তি হিসেবে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয় ওই সংবাদ সংস্থা থেকে। সেখানে আমীরের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রপ্রধান শেখ তামিম ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বোধহয় বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবেন না।
এরপর কাতার সরকার সংবাদ সংস্থাটিতে হ্যাক হওয়ার খবর জানায় এবং বলে, শেখ তামিম এমন কোন কথাই বলেননি।
ওয়াশিংটন পোস্ট এবং আল-জাজিরা জানায়, হ্যাকিং ঘটনার পরদিন বুধবার সাংবাদিকদের উদ্দেশে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেন, ‘এ ধরনের হামলা, বিশেষ করে সাইবার হামলা মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক আইনকানুন রয়েছে। হ্যাকারদের ওই আইনের আওতায়ই বিচার হবে।’
তবে কাতার সরকার শেখ তামিমের নামে ওই ভুয়া মন্তব্য অস্বীকার করার পরও সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ আরাবিয়া এবং আল আরাবিয়া ওই ভুয়া সংবাদই প্রচার করতে থাকে। এর ফলে ওই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং কাতারের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা ছড়ানোর পাশাপাশি কাতারের মধ্যেও উপসাগরীয় দেশগুলো সম্পর্কে বিরূপ আবহাওয়া তৈরি হতে শুরু করে।
এ ধারাবাহিকতায়ই জঙ্গিবাদ সমর্থন করে উপসাগরীয় অঞ্চল অস্থিতিশীল করার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, রিয়াদ কাতারের সঙ্গে তাদের স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ সীমান্ত এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এসপিএ জানায়, উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদ থেকে সৌদির জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মিশরও কাতারের সঙ্গে আকাশসীমা এবং সব বন্দর পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কাতারের কূটনীতিকদেরকে দেশ ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আবুধাবির অভিযোগ, দোহা জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা এবং বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে সমর্থন, অর্থায়ন এবং গ্রহণ করছে। ইউএই’র রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়্যাম এ কথা জানায়।
অন্যদিকে নিজেদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কাতারের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বাহরাইন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, কাতার ‘বাহরাইনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নড়বড়ে করে দিচ্ছে এবং এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।’
ইয়েমেনের হাউদি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধরত সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট থেকেও কাতারকে বের করে দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কাতারের কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসবাদকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও আল-কায়েদা ও আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনকে মদদ দেয়া এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগও তোলা হয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে।