গান নয়, চার বছর বয়সে মূল আগ্রহ ছিল নাচে। কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার শৈশবের এই গল্প হয়তো জানেন না অনেকেই। বছর তিনেক আগে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে এক আড্ডায় উঠে আসে তাঁর ছোটবেলার অনেক স্মৃতি। আজ তাঁর জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে থাকলো সেই আড্ডা আয়োজনের অংশ বিশেষের পুনর্পাঠের সুযোগ:
চার বছর বয়সেই নাচ শিখতেন রুনা লায়লা, গানের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ বা ভালবাসা গড়ে ওঠেনি তখনও। বড় বোন দীনা লায়লাকে গান শেখাতে যে ওস্তাদ আসতেন, তাঁর সামনেই খেলার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে বসে যেতেন বোনের সাথে। সেই ওস্তাদজিই একদিন তাঁর মাকে জানালেন তাঁকে গান শেখানোর কথা। প্রখর স্মৃতিশক্তির কারণে ঐটুকু বয়সেই যে কোন গান তুলে মুখস্থ করে ফেলতেন অনায়াসেই। আর সঙ্গে ছিল তাল লয় আর সুরের জ্ঞান।
এইসব গুণেই শিশু রুনা লায়লার মাঝে আগামীর শিল্পীর সম্ভাবনা হয়ত দেখেছিলেন সেই সংগীত শিক্ষক। তবে, মেধাবী হলেও শৈশবে প্রচণ্ড ফাঁকিবাজ ছিলেন বলে দাবি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা এই কণ্ঠসম্রাজ্ঞীর।
গান শেখা শুরু করার পর কখন যে এই ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস হয়ে উঠেছিলেন তা নিজেও টের পান নি। খুব কম বয়সেই প্লেব্যাকের মাধ্যমে অল্পদিনেই খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেন রুনা লায়লা। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ও মা আমেনা লায়লার দ্বিতীয় সন্তান রুনা লায়লা ক্রমেই হয়ে ওঠেন উপমহাদেশীয় সংগীত জগতের এক বিস্ময়কর নাম।
প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের সংগীত ক্যারিয়ারে মোট ১৮টি ভাষায় দশহাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি। রুনা লায়লাই সম্ভবত একমাত্র শিল্পী যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই তিন দেশেই সমান ভাবে জনপ্রিয়।
এই খ্যাতি দারুণভাবে উপভোগও করেন তিনি। ভক্তদের ভালবাসাতেই আজ তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। শ্রোতাদের জন্যই তিনি হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তী রুনা লায়লা। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শুধু গানই নয়, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন রুনা লায়লা।
বসার ঘরের এক কোণার পুরোটা জুড়ে সাজানো তাঁর অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কার। সেগুলো মুগ্ধ চোখে দেখতে দেখতেই ছোটবেলার জন্মদিনের কথা চলে এলো। জিজ্ঞাসা করতেই স্মৃতিকাতর হয়ে জানালেন, শৈশবে তাঁর কাছে জন্মদিন মানেই ছিল মায়ের হাতে সেলাই করা নতুন জামা। সেই জামা পড়েই বেশ ঘটা করে বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে জন্মদিন পালন করতেন তিনি।