এনামুল হক বিজয় যখন আউট হলেন ৫ ওভারে দরকার আরও ৪১ রান। আরেকটি ওভার শেষে সমীকরণ দাঁড়াল ২৪ বলে ৩৮। হাতে ৮ উইকেট থাকায় চিন্তা অতটা ছিল না। কিন্তু ফিফটি পেরিয়ে ক্রিজে থাকা এভিন লুইস বেশ কয়েকটি বল ব্যাটে লাগাতে না পারায় জমতে থাকে শঙ্কার মেঘ। নতুন ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান শুভ নেমে লুইসকে বানিয়ে রাখলেন দর্শক! ৪টি চার ২ ছয়ে ১৫ বলে ৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ৭ বল আগেই বিপিএলের ফাইনালে তুলে নিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে।
ইমরুল কায়েস বরাবরই আস্থাশীল শামসুরের ওপর। রংপুর রাইডার্সকে ৮ উইকেটে হারানোর ম্যাচে ব্যাট হাতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে কুমিল্লার অধিনায়কের প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিলেন এ ব্যাটসম্যান। ইমরুলের বিশ্বাস, ফাইনালেও প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠবেন বাংলাদেশ দলে তার এক সময়ের সতীর্থ।
‘শামসুরের ব্যাটিংটা আমাদের টিমের জন্য খুব দরকার হচ্ছে এবং কার্যকরী হচ্ছে। একদিন তিনে খেলাচ্ছি, একদিনে চারে খেলাচ্ছি, ওকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটিং করাচ্ছি পরিস্থিতি অনুযায়ী। শুভ কিন্ত জাতীয় দলে খেলেছে, তার কোয়ালিটি ওরকমই আছে। একবার বিপিএলে অনেক রান (৪২১) করেছে। তার কোয়ালিটি আছে বলেই রান করতে পারছে। ফাইনালেও বিশ্বাস করি ভালো করবে। শুভর মতো খেলোয়াড় ভালো খেললে ভালো লাগে। এরা তো কোয়ালিটিফুল খেলোয়াড়।’
মিরপুরে বিপিএলের প্রথম পর্বের চার ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি শামসুর। তবে সিলেট পর্ব থেকে নিয়মিত খেলছেন ৩০ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করলেও দেখিয়েছেন রান তোলায় ধারাবাহিকতা। ফিফটি নেই, তবে ছোট ছোট কার্যকরী ইনিংস খেলে রেখেছেন অবদান। ৯ ম্যাচে করেছেন ২১০ রান। তিন ম্যাচেই ছিলেন অপরাজিত। যে কারণে গড় ৩৫.০০। স্ট্রাইকরেট চোখে লাগার মতই, ১৩৬.৩৬।
অথচ বিপিএলের গত আসরে কী বাজে অভিজ্ঞতাই না হয়েছিল শামসুরের! পড়তে হয়েছিল লজ্জাজনক এক পরিস্থিতিতে। প্লেয়ার্স ড্রাফটে তাকে কেউ না নিলেও পরে রংপুর রাইডার্স যোগ করে নেয় স্কোয়াডে। ম্যাচ খেলানো দূরে থাক; আসরের মাঝপথে চট্টগ্রামের মাঠে খেলতে রাইডার্সরা চলে যায় শামসুরকে ঢাকায় রেখেই।
তাকে জানানো হয় দলের পরিধি ছোট করায় সে এখন স্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটার। সেই ঘটনায় মনের কষ্ট চাপা রাখতে পারেননি শামসুর। ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিকদের কাছে।
পরের বছর জাতীয় লিগের দল ঢাকা মেট্রোর কোচের কথায় অপমানিত বোধ করে দল থেকেই সরে যান শামসুর। পারফরম্যান্স, ফিটনেস নিয়ে তোলা হয় নানা প্রশ্ন! তবে বিপিএল শুরুর আগে গত বছরের নভেম্বরে বিসিএলে সাউথ জোনের এ ওপেনার সবশেষ চার ম্যাচে করেন দুটি সেঞ্চুরি। ৬ ইনিংসের ব্যবধানে দুটিতে করেন ১৫৩ ও ১২১। উন্নতির ছাপ রেখে যাচ্ছেন দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের মঞ্চ বিপিএলেও।