ঢাকা অ্যাপারেল সামিট ২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু ব্যবসা করে পয়সা কামালেই হবে না, নিজেদেরও কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যবসায়িক মানসিকতার উর্ধ্বে উঠে ও সরকারের থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য তাকিয়ে না থেকে অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য দিকে তাদের নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এমন কথা কেন বলেছেন তা আমাদের বোধগম্য। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও শ্রমিক অধিকার সংস্থার অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। কারণ, এই শিল্পে উদ্যোক্তাদের সরকারের পক্ষ থেকে এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কেন অভিযোগ শুনতে হবে! ইতোপূর্বে দেখা গেছে, কম বিনিয়োগে বেশি মুনাফার আশায় কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ ও মানের বিষয়ে অনেকে উদাসীন। তাদের এই উদাসীনতার কারণেই পোশাক কারখানাগুলো বারবার মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব বিষয়ে মালিকপক্ষকে কঠিন নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। এছাড়া শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী নিয়ে বিক্ষোভ নিরসনে সরকারের আরো জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগও আছে। এ কথা সত্য যে, গার্মেন্টসের অধিকাংশ কর্মী হচ্ছে অল্পশিক্ষিত গ্রামীণ নারী। তাই তাদেরকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল হিসেবে গড়ে তোলার দিকেও নজর দেয়া জরুরী। প্রশিক্ষিত জনবল থাকলে তারা অসাধু শ্রমিক নেতা ও দেশবিরোধী কুচক্রী মহলের প্ররোচণায় সহজে পা দেবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু এই কাজটি তেমনভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষ রুখতে তাদের সঙ্গে প্রজাসূলভ আচরণ না করে নিয়মিত তাদেরকে কাউন্সেলিং করানো যেতে পারে। একইভাবে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মজুরী, কর্মপরিবেশ নিশ্চিতসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ও মালিকপক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নজরে আনা দরকার। না হলে আমাদের পোশাক শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের দুর্বলতাগুলো ব্যবহার করে বাজার নষ্ট করতে পারে। এতে বিদেশী মুদ্রা অর্জনের অন্যতম বড় এ ক্ষেত্রটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এর আগেই এ খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দরকার।