চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শুধু ব্লগাররাই টার্গেট নন: টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া

বাংলাদেশে শুধু ব্লগাররাই নন বাউল,ব্যান্ড শিল্পী, চিত্রশিল্পী,ভাস্কর, ফটোগ্রাফার এবং নারী অধিকারকর্মীরাও উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। বাংলাদেশে মুক্তমতের চর্চায় উগ্রবাদীদের হামলা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ব্লগার অনন্য আজাদ,ব্যান্ড শিল্পী মাকসুদ, বাউল শিল্পী আব্দুল মান্নান, নারী অধিকারকর্মী সুপ্রীতি ধর, ভাস্কর রাশা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ প্রমুখের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এদের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে প্রশাসনের অবস্থান এবং ব্লগারদের প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ভারতীয় সংস্করণে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের নিরাপত্তাহীনতা এবং তাদের ওপর হামলা ও হুমকির চিত্র তুলে ধরেছেন সংবাদমাধ্যমটির রাজনীতি ও সংঘর্ষ বিষয়ক প্রতিবেদক সোনিয়া সরকার।

‘মেইবি টুডে ইজ মাই লাস্ট ডে’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে মুক্তমত চর্চাকারীদের নিরাপত্তাহীনতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনটির শুরু হয়েছে নারী অধিকারকর্মী সুপ্রীতি ধরের সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার বর্ণনা দিয়ে। সুপ্রীতি জানান, এখন তিনি কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। সব সময় মনে হয় আড়াল থেকে অনেকগুলো চোখ তার ওপর নজর রাখছে’। পরপর পাঁচদিন তাকে ৫২ বার প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদক সোনিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে উগ্রবাদীদের ‘হিট লিস্টে’ থাকা ব্লগার অনন্য আজাদ জানিয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায় জার্মানিতে পাড়ি জমাতে হয়েছে তাকে। অনন্য বলেন, ‘ দেশে থাকার সময় মনে হয়েছে আজই হয়তো আমার শেষ দিন। বাংলাদেশে থাকতে হলে আপনাকে মুখ বন্ধ রাখতে হবে, ভাঙতে হবে কলম আর মস্তিষ্ক ছুড়ে ফেলতে হবে ডাস্টবিনে’। উল্লেখ্য অনন্য আজাদের বাবা প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করেছিলো উগ্রবাদীরা।

শুধু ব্লগাররাই নন বাংলাদেশে মুক্তমতের চর্চা করেন এমন সবাই ঝুঁকিতে আছেন। সোনিয়ার প্রতিবেদনে অতীত ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনের কয়েকজন সুপরিচিত ব্যক্তি। ‘মাকুসদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডের শিল্পী মাকসুদ (ম্যাক) বলেন, “আমরা সর্বদা সন্ত্রস্ত থাকি যে, এরপর কে”। বাউল শিল্পী আব্দুল মান্নান বলেন,‘ তারা চায় না আমরা গান গাই,এজন্য তারা বাউলদের ওপর হামলা করছে, জোর করে চুল-দাড়ি কামিয়ে দিচ্ছে’।

ভাস্কর রাশা বলেন,‘ বেশ কয়েকবছর ধরেই এধরণের উগ্রবাদের শিকার হচ্ছেন মুক্তমনারা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ৬ মাসে ৪ জন ব্লগারকে হত্যার পর পরিস্থিতি আতঙ্কে রূপ নিয়েছে’। ভীতির মাত্রা বোঝাতে গিয়ে সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ সোনিয়াকে বলেছেন,‘ব্লগার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলনের ডাক দিলেও বড়জোড় একশ জন আসছেন রাজপথে’।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন,‘ স্বকীয় সংস্কৃতির জোরে স্বাধীনতা অর্জন করা দেশটির সেই সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাই আজ হুমকির সম্মুখীন’।

এসব বক্তব্যের পাশাপাশি ব্লগারদেকে পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের ‘সীমা লঙ্ঘন’ না করার পরামর্শ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাম্প্রতিক বক্তব্য উঠে এসেছে। প্রশাসনের এমন অবস্থানের পরও মৌলবাদী শক্তি ব্লগারদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ব্লগারদের নিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাফরুল্লাহ খান টেলিগ্রাফকে বলেন,‘ ধর্ম অবমাননার জন্য সরকার ব্লগারদের শাস্তি দিলে কেউ তাদের হত্যা করতো না’।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন